শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় সমাবেশ

তৃণমূলের প্রতি বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম রনি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আজ প্রথমবারের মতো জনসভায় ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশাল বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিজয় সমাবেশ’র আয়োজন করেছে হ্যাটট্রিক বিজয়ী আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশ থেকে বিপুল সমর্থন জানানোয় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি দলীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাস নির্মূলে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুশাসনমূলক নির্দেশনা দেবেন তিনি। দলের দায়িত্বশীল সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের পর দলের নেতা-কর্মীদের আনন্দ মিছিল-সমাবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কোথায়ও আনন্দ মিছিল সমাবেশ তারা করেননি। বিশাল জয়ের আনন্দ থেকে নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করতে চায়নি দলের হাইকমান্ড। তাই আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা আড়াইটায় শুরু হবে ‘বিজয় সমাবেশ’। ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পর এটাই প্রথম জনসভা আওয়ামী লীগের। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আগামী মার্চ মাসে শুরু হবে উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনের মতোই ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। যেসব জেলা-উপজেলায় সংগঠনের দীর্ঘদিন সম্মেলন হয় না সেখানে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সম্মেলন শেষ করতে বলা হবে। গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আজকের বিজয় সমাবেশ থেকেও দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের মতোই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করবেন।

 এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বিষয়ে নেতা-কর্মীদের দূরে থাকতে আহ্বান জানাবেন দলের সভানেত্রী।  বিশেষ করে মাদক নির্মূলের যুদ্ধে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। সংসদ নির্বাচনের গণজোয়ারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়ে স্মরণকালের বিশাল সমাবেশে রূপ নেবে। এটা আওয়ামী লীগের ও শেখ হাসিনার সততার ফসল। সারা দেশ থেকে মানুষের ঢল নামবে। বিজয় সমাবেশ কর্মসূচিতে দেখা গেছে, বিকাল আড়াইটায় মঞ্চে আসবেন শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে গানে গানে স্বাগত জানাবেন সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। এরপর নির্বাচনে সাড়া জাগানো ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানের শিল্পীদের পরিবেশনা। নৌকার আদলে তৈরি বিশাল মঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা বসবেন। সমাবেশ মাঠে ছোট-বড় ৫০-এর অধিক নৌকা ও বৈঠাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে। বিজয় সমাবেশটি মহাসমুদ্রে রূপ দিতে রাজধানীর পার্শ¦বর্তী জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনসহ ঢাকা মহানগরের দলীয় নেতা-কর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিজয় সমাবেশকে বিজয় আনন্দে রূপ দিতে বরেণ্য শিল্পীরা বিভিন্ন গান পরিবেশন করবেন। এ লক্ষ্যে মূল বিজয় মঞ্চের সামনে পৃথকভাবে আরেকটি মঞ্চ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ডে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারের মলাটের রঙের আদলে সজ্জিত করা হয়েছে। বেলা ১১টার পর থেকে বিজয় সমাবেশে নেতা-কর্মীরা প্রবেশ করতে শুরু করবেন।  বেলা ১২টার পর সংগীতশিল্পীরা বিভিন্ন গান পরিবেশন করবেন। আড়াইটার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে আসবেন। বিজয় সমাবেশে গান পরিবেশন করবেন শিল্পী মমতাজ বেগম, আঁখি আলমগীর, রফিকুল আলম, ফাহমিদা নবী, কল্পনা মজুমদার, জলের গান এবং ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানের শিল্পীরা। এরপর দলের নেতারা বক্তব্য রাখবেন। এদিকে এই বিজয় সমাবেশকে স্মরণীয় করে রাখতে আওয়ামী লীগ সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তর, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঢাকার বাইরেও পার্শ¦বর্তী জেলাগুলো থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে হাজির হবেন সমাবেশ স্থলে।

৫২ হাজার লাল-সবুজের পতাকা : দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের যে কোনো সভা সমাবেশে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। শনিবারের বিজয় উৎসবে ভিন্নমাত্রা দিতে লাল-সবুজের পতাকা ও লাল ফিতা হাতে নিয়ে মাঠে থাকবে সংগঠনের ৫২ হাজার নেতা-কর্মী। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।  

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট জানিয়েছেন, শনিবারের আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রাখতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে ৭০০ নেতা-কর্মী লাল-সবুজের গেঞ্জি পরিহিত হয়ে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হবেন। তাদের হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং লাল ফিতা থাকবে। রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা যখন বক্তৃতা করবেন পতাকা নেড়ে তাকে স্বাগত জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর