রবিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

জনসমুদ্রে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর কোনো ধরনের বিজয় মিছিল না করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিজয়ের উৎসবের স্বাদ থেকে বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করেননি তিনি। এ জন্য গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হয়েছিল ‘বিশাল বিজয় সমাবেশের’। আওয়ামী লীগের এ বিজয় সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত ও ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকেন। দুপুরের মধ্যেই মানুষ আর মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সমাবেশস্থলের আশপাশের রাস্তাতেও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। লাল-সবুজ ও সাদা টি-শার্ট, টুপি পরা নেতা-কর্মীদের ভিড় ও স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল গোটা এলাকা। সেখানে ছিল না উৎসবের কমতি। নানান বাদ্যযন্ত্র, দলীয় প্রতীক নৌকা, ব্যান্ডপার্টি, হাতি, ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মানুষ। কেউ কেউ নিজেরাও সেজেছিলেন বর্ণিল সাজে। সব মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিশাল বিজয় উদযাপনকে উৎসবের বর্ণিল আয়োজনে পালন করে আওয়ামী লীগ। ট্রাক, বাসে বাজানো হয় আওয়ামী লীগের দলীয় সংগীত ও বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান। নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এবং কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সঙ্গে ঢাকঢোলের বাদ্যে মুখর লাখো মানুষকে জনপ্রিয় শিল্পীরা গানে গানে মাতিয়ে রাখেন। বেলা ৩টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে এবং পেছনের ব্যানারে সাজানো দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে সুদৃশ্য ও নান্দনিক সুবিশাল মঞ্চে উপস্থিত হন, তখন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক ঘটনার সাক্ষী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে আসার পর শুরু হয় সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও টানা দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের গানের তালে তালে মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দীর পরিচালনায় দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। মমতাজ বেগম ‘শুকরিয়ারে শুকরিয়া, কোটি কোটি শুকরিয়া/ বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া’ গানটি দিয়ে শুরু করেন। পর পর তার তিনটি গানের সঙ্গে সুর মেলান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জনসমুদ্রে যোগ দেওয়া লাখ লাখ নেতা-কর্মীও। এর পরই মঞ্চে আসেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনী প্রচারে যে গানটি সারা দেশের মানুষকে উদ্বেলিত করে তুলেছিল, তৌহিদ হোসেনের কণ্ঠে এবং সালোয়ার আলমের লেখা যে গানটি মাত্র এক ঘণ্টায় দেশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ শুনেছেন- সেই জনপ্রিয় ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ গানের শিল্পীরা। নির্বাচনের আগে এবং বিজয়ের পরে চারজন শিল্পী যখন গানটি শুরু করেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীসহ তখন জনসমুদ্র থেকেও ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’, জয় বাংলা, জিতলো আবার নৌকা’ গানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালে পুরো উদ্যান প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সমাবেশে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম, ফকির আলমগীর, জানে আলম, পথিক নবী, আঁখি আলমগীর, সালমারা গান গেয়ে শোনান। ব্যান্ডদল জলের গানও তাদের পরিবেশনা নিয়ে আসে এ উৎসবে। গানে গানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গত এক দশকে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন শিল্পীরা। কবি রাসেল আশেকী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী, ঢাবির সনজিৎ দাস ও সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরিকুল ও শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো।

সর্বশেষ খবর