শিরোনাম
সোমবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির কালো ব্যাধি দূর করব

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির কালো ব্যাধি দূর করব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদক সমাজের কালো ব্যাধি। আমরা সবসময় এটাই চাই, এসব কালো ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করা। এ জন্য যা করণীয় তা আমাদের করতে হবে। কারণ একটা দেশকে যদি আমরা উন্নত করতে চাই, তাহলে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। উপস্থিত ছিলেন জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারি, র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতরের প্রধানরা। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর পরিদর্শনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো, আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, দুর্নীতিও একটা কালো ব্যাধি। এটা সমাজের উন্নয়ন যথেষ্ট ব্যাহত করে। সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে এবং দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, যে দেশেই মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় আসে, তারা প্রথমেই সমাজটাকে ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিটাকে তারা নীতি হিসেবে নেয় এবং সুযোগও সৃষ্টি করে দেয়। ঋণখেলাপি থেকে শুরু করে যা কিছু বাংলাদেশে আমরা দেখি, তার গোড়াপত্তন কিন্তু ’৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের হাতে।

শেখ হাসিনা বলেন, যে পরিবারে একটা মাদকাসক্ত আছে, সে পরিবারের যে কী কষ্ট, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। সে কারণে অভিযানটাকে আরও ব্যাপকভাবে পরিচালনা করতে হবে।  মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদকাসক্তির খারাপ দিকটি মানুষের সামনে তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সমাজের সব স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে প্রচার চালাতে হবে। তিনি বলেন, অপরাধীরা কেন অপরাধে সম্পৃক্ত হয়, তা খুঁজে বের করতে হবে। শুধু তাদের (অপরাধী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই যে তারা ভালো হয়ে যাবে তা নয়। বরং তাদের সমাজের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারাটাও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে অপরাধী আবার অপরাধের জীবনে ফিরে যায়। তিনি মাদকাসক্তদের নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সেবা আরও বিস্তৃত করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা সৃষ্টিরও তিনি নির্দেশনা দেন। শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকতে হবে। এ ছাড়া যারা সুস্থভাবে সমাজে ফিরে আসতে চাইবে, সুস্থ জীবনে ফিরতে চাইবে, তাদেরও সুযোগ করে দিতে হবে। আমি মনে করি, এই মন্ত্রণালয়ে যারা কাজ করেন সবাইকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা পরবর্তী সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে এক করে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই কিন্তু এই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো আমার মনে হয় অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এত ঘন বসতির দেশেও দক্ষতার সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এটা খুব কঠিন কাজ এবং সেটা আমরা করতে পেরেছি। এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সড়কে যানজট কমাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতি যত ভালো হচ্ছে, মানুষের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ছে। গাড়ি কেনা ও মানুষের চলাচলও বাড়ছে। ট্রাফিক জ্যাম একটা বিরাট সমস্যা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ সমস্যার সমাধানে আরও আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও চালকদের সচেতনতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তা ধরে রেখে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধীরে ধীরে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সমালোচনা করা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির একটি সাধারণ ঘটনা : দেশের মানুষ ও ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই প্রথম, যারা টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে। এর অন্যতম কারণ, আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ অনুধাবন করেছে, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের জন্য কাজ করে। গত শনিবার রাতে ভারতীয় টিভি চ্যানেল সিএনএন নিউজ এইটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভরাডুবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভোটাররা আসলে নিশ্চিত হতে পারেনি তাদের দলের নেতা কে? আর ক্ষমতায় এলে কে সরকারপ্রধান হবেন? এ ছাড়া যে পদ্ধতিতে তারা মনোনয়ন দিয়েছে, তা একটা বাণিজ্য। কেউ কেউ টাকা দিয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন। আবার মনোনয়ন পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে পরিবর্তনও করেছেন। আসলে তাদের চিন্তাভাবনা ভুল ছিল। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত একটি জোট। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী একটি যুদ্ধাপরাধী দল। তাদের অনেক নেতার শাস্তি হয়েছে। সেই জামায়াতকে  সঙ্গে নেওয়ায় দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এর পাশাপাশি তাদের দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী কর্মকাে র কারণে মানুষ সম্পূর্ণভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আর আওয়ামী লীগকে সবাই ভোট দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সমালোচনাকারীদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমালোচনা করা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির একটি সাধারণ ঘটনা। আমাদের দেশের গণমাধ্যম স্বাধীন। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। সবাই সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু কোথায় ত্রুটি হয়েছে তা তারা দেখাক। তাহলে ভবিষ্যতে আমরা এ বিষয়ে সচেতন হতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে, দারিদ্র্যসীমা কমছে-এ দেশের মানুষ কেন ভারতে গিয়ে থাকবে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগ্রহী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এক্ষেত্রে বাধা। আমি নিজেও তার (মমতা ব্যানার্জি) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও আগ্রহী। কিন্তু কেন যে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এ চুক্তি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তা বাংলাদেশের ভিতরে কিংবা প্রতিবেশী দেশ-এটা সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় আমার সরকার সব পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি ঘোষণা দিয়েছি, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ প্রতিবেশী দেশেও সন্ত্রাসী কাজকর্ম করতে পারবে না। কারণ, আমি চাই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের এমন গৃহীত পদক্ষেপ অবশ্যই অব্যাহত থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের  মানুষ মিলেমিশে বসবাস করছে এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে ও সম্মানের সঙ্গে স্ব স্ব ধর্ম পালন করতে পারে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। মিয়ানমার থেকে ১ মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বড় বোঝা। খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হওয়া উচিত। রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আস্থার মর্যাদা রক্ষা করা হবে : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বলেই মানুষ ব্যাপকহারে নৌকায় ভোট দিয়েছে। যার ফলে চতুর্থবারের মতো এবং টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন সম্ভব হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন তার মর্যাদা রক্ষা করা হবে। গতকাল সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করতে এলে তাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতি মর্যাদা দেখিয়ে অত্যন্ত  ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে চলতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া আসন থেকে তাকে পুনরায় নির্বাচিত করায় সেখানকার জনগণের কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপস্থিত নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান। এর আগে নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

ওআইসি মহাসচিবের অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজের (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমাদ আল ওথাইমিন। গতকাল সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ৪৬তম সম্মেলনের প্রস্তুতি সভার উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এ অভিনন্দন জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওআইসির মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন,  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি, উন্নয়ন ও প্রগতির পথে যাত্রা অব্যাহত রাখবে।

সর্বশেষ খবর