বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
জব্দ হচ্ছে কারবারিদের সম্পদ

ইয়াবায় কোটিপতি ইয়াবায় নিঃস্ব

সাখাওয়াত কাওসার

২০০৭ সালেও দিনমজুর ছিলেন কক্সবাজারের টেকনাফের নাজিরপাড়ার সহোদর নুরুল হক ওরফে ভুট্টো (৩২) ও নুর মোহাম্মদ (৩৫)। মাঠের কাজ না থাকলে জীবিকার তাগিদে মাঝেমধ্যেই রিকশা চালাতেন দুই ভাই। অভাবের সংসারে তাদের বৃদ্ধ বাবা এজাহার মিয়ারও (৬৭) বসে থাকার উপায় ছিল না। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনিও মাঝেমধ্যে রিকশার প্যাডেল ঘোরাতেন। তবে ২০০৯ সালে হঠাৎ করেই ভুট্টো দেখা পান ‘আলাদিনের চেরাগের’। মরণ নেশা ‘ইয়াবা’ বড়ির ব্যবসা করে রীতিমতো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয় ভুট্টো পরিবারের। ফুলেফেঁপে পাহাড়সম হতে থাকে সম্পত্তি। যদিও এই ইয়াবার কারণেই আজ নিঃস্ব হতে চলেছেন ভুট্টোরা। মানি লন্ডারিং ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনুসারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি গত ২২ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (বিশেষ জজ) তাদের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আবেদন জানিয়েছে। নতুন মাদক আইন কার্যকর হওয়ার পর এটাই প্রথমবারের মতো কোনো মাদক ব্যবসায়ীর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন। এটা গৃহীত হলে সব ইয়াবা ব্যবসায়ীর সম্পদ জব্দ হতে পারে। সিআইডি সূত্র বলছেন, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ১২ নম্বর মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে ভুট্টো, নূর মোহাম্মদ ও তাদের বাবা এজাহার মিয়ার ইয়াবা ব্যবসার ভয়ঙ্কর কাহিনী। ভুট্টোর ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা তারই আত্মীয়স্বজন। বড় ভাই নূর মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানে এ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যরা হলেন ভাগ্নে জালাল উদ্দীন, মো. বেলাল, আবছার উদ্দীন, মো. হেলাল, মো. হোছেন। ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট গ্রেফতারের সময় ভুট্টোর কাছ থেকে ইয়াবা বিক্রির নগদ ২৪ লাখ টাকা পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা বিক্রির টাকা নুরুল হক ভুট্টো, নূর মোহাম্মদ ও এজাহার মিয়া আটটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক এবং টেকনাফের বিকাশ এজেন্ট হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স, স্টার ফার্মেসি, মোজাহার স্টোর, মোবাইল গ্যালারির মাধ্যমে লেনদেন করতেন। উদ্ধারকৃত টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হেফাজতে রাখা আছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভুট্টো গং ব্যাংকের মাধ্যমেই ইয়াবা ব্যবসার লেনদেন করতেন। ২০১৪ সালের পর ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে লেনদেন করতেন। তদন্তে নয়টি দলিলে ভুট্টো ও তার ভাইয়ের নামে ১ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও সম্পত্তির দলিলে উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে প্রকৃত মূল্য ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি হবে। টেকনাফের নাজিরপাড়ায় রয়েছে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের আলিশান দোতলা বাড়ি। তবে কক্সবাজার সদর ও খুলনায়ও ভুট্টোর আরও দুটি আলিশান বাড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট টেকনাফ মডেল থানার ৭০ নম্বর মামলার তদন্তে পাওয়া গেছে, এজাহারনামীয় গ্রেফতার ১ নম্বর আসামি নুরুল হক ওরফে ভুট্টো, ২ নম্বর আসামি নুর মোহাম্মদ ও ১০ নম্বর আসামি এজাহার মিয়া ইয়াবা ব্যবসা করে ‘বিকাশ’ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৭ টাকা লন্ডারিং করেছেন এবং দলিল অনুযায়ী ১ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ইয়াবার টাকায় অঢেল সম্পত্তি ও বিলাসবহুল বাড়ির মালিক হয়েছেন। মাদকের টাকায় অর্জিত সম্পত্তি ক্রোক করা না হলে বেহাত হবে ও রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হবে। অপরাধলব্ধ আয় দ্বারা অর্জিত সম্পত্তি অন্যত্র বিনিয়োগ করে আরও অপরাধের সৃষ্টি করবে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ বলেন, ‘কক্সবাজার ও খুলনায় ভুট্টোর আরও দুটি আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত এর প্রমাণ না পেলেও আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ১৪ ধারা মোতাবেক বর্ণিত সম্পত্তি ও বাড়ি ক্রোক এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ২১ ধারা মোতাবেক ওই সম্পত্তির ব্যবস্থাপক বা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কক্সবাজার জেলা পুলিশকে নিয়োগ দিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর