বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

যমুনা ব্যাংক এমডি মানছেন না সুপ্রিম কোর্টের আদেশও

তলব হাই কোর্টের, ২৯ জানুয়ারি উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

যমুনা ব্যাংক এমডি মানছেন না সুপ্রিম কোর্টের আদেশও

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান। আর এই সংবিধানের অভিভাবক দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের কোনো আদেশ বা রায় দেশের সবার জন্য মানা বাধ্যতামূলক। সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বা রায় অমান্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরপরও যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আলম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে চলেছেন। শফিকুল আলমের এই ঔদ্ধত্ব হাই কোর্টের নজরে আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে। এ কারণে শফিকুল আলমকে তলব করেছে হাই কোর্ট। আগামী ২৯ জানুয়ারি তাকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করার ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত ব্যানার্জি ও এ আর এম কামরুজ্জামান কাকন। আদেশের পর ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন জানান, ব্যাংকের সব নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন করা হলেও টাকা দিচ্ছে না যমুনা ব্যাংক। এরপর হাই কোর্টে মামলা করলে আদালত টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আদালতের এই আদেশের পর তারা (যমুনা ব্যাংক) আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগ তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পরও তারা টাকা দিচ্ছে না। এটা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়েছে। ঘটনার বিবরণী থেকে জানা যায়, তালেবুন নূর নামের একজন ব্যবসায়ী ২০০৫ সালের ৫ মার্চ যমুনা ব্যাংকে ৫১ লাখ টাকার একটি এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) (মুদারবা) অ্যাকাউন্ট করেন। পরবর্তীতে তালেবুন নূর ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, তার ব্যবসায়িক বন্ধু এ আই এম হাসানুল মুজিব ওই অ্যাকাউন্টের টাকা পাবেন। যমুনা ব্যাংক তালেবুন নূরের স্বাক্ষরের সত্যতা শনাক্ত করে ২০১১ সালে। এরপর এফডিআরের টাকা উত্তোলনের জন্য হাসানুল মুজিব আবেদন জানালেও যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। এরপর একই বছরের ৩ জুলাই হাসানুল মুজিব বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেন। কিন্তু সেখানে প্রতিকার না পেয়ে ২০১৬ সালে টাকা উত্তোলনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন হাসানুল মুজিব। এ আবেদনের ওপর শুনানির পর ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ৩০ দিনের মধ্যে টাকা দিতে যমুনা ব্যাংককে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এরপর এ আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও যমুনা ব্যাংক আপিল করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এরপরও টাকা না দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। এ মামলায় যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলব করল হাই কোর্ট। ব্যাংক খাতে বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণে জালিয়াতিতেও উঠে এসেছে যমুনা ব্যাংকের নাম। ব্যাংকিং খাতে আলোচিত কয়েকটি বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির মধ্যে রয়েছে-বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা। বিসমিল্লাহ গ্রুপ যে ৫টি ব্যাংকে কেলেঙ্কারি করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যমুনা ব্যাংক। তারা ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এর মধ্যে যমুনা ব্যাংক থেকে ১৫৪ কোটি।

এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও শফিকুল আলম যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে ফের পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেশি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে সর্বোচ্চ বেতনধারীও শফিকুল আলম। তিনি পান ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি। তিনি ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যমুনা ব্যাংকে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ইউসিবিএলের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন।

সর্বশেষ খবর