মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
নেপালে বিমান বিধ্বস্ত

পাইলট ও টাওয়ারের ব্যর্থতায় দুর্ঘটনা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নেপাল। রবিবার প্রকাশিত ৪৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে পাইলটের মানসিক চাপে থাকা, ল্যান্ড করতে ভুল করাসহ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়। এদিকে পাইলটকে একপেশে দোষারোপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ (এএআইজি-বিডি)। গতকাল বিকালে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন এএআইজি-বিডির প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে পাইলট সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে সেগুলো ঠিক আছে, তবে নেপালের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার-এটিসি’র ভুল সংক্রান্ত বিষয়গুলো ওঠে আসেনি।’ এটিসি বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে অ্যামেনডমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ। বিমান দুর্ঘটনাকে কোনোভাবেই পার্সোনালাইজ করা হয় না বলে উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন রহমতউল্লাহ বলেন, ‘নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে তা ঠিক আছে। তবে পাইলটকে একপেশে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু নেপাল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) যে ত্রুটি ছিল এগুলো উঠে আসেনি। পাইলট ল্যান্ড করতে অ্যাপ্রোচ মিস করেছিল। কিন্তু এটিসি পাইলটকে সহায়তা করতে পারত কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। বরং বিমানটি যখন এটিসি টাওয়ায়ের কাছ দিয়ে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়, তখন এটিসির কর্মকর্তারা টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন।’ এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ-এর সংবাদ সম্মেলনে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান বলেন, ‘অনেক সময় পাইলটরা দিক হারিয়ে ফেলেন। এটা প্রায়ই ঘটে। নেপালে পাহাড়ঘেরা বিমানবন্দর হওয়ায় এ ঝুঁকি বেশি। সেদিন পাইলট দিক হারিয়ে ফেলেছিলেন। পাইলট কোনো কারণে অ্যাপ্রোচ মিস করেছেন। তবে তাকে সহায়তার করার দায়িত্ব ছিল এয়ার ট্রাফিক কট্রোলারের। নেপালের এটিসি সেটি করেনি।’ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, ‘ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান একাই বিমানটি পরিচালনা করেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি রেডিওতে যোগাযোগ করছিলেন। এটা দোষের কিছু না, পাইলট চাইলে এটি করতে পারতেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাইলট যখন অ্যাপ্রোচ মিস করেন, তখন গ্রাউন্ডে থাকা দুজন পাইলট এটিসিকে অনুরোধ করেন- ইউএস বাংলার পাইলটকে রাডারের মাধ্যমে সহায়তা করার জন্য। কিন্তু এটিসি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এটিসি সহায়তা করলে এ দুর্ঘটনা হয়তো হত না।’

নেপালের প্রতিবেদনে যা আছে : গত রবিবার নেপালের পর্যটনমন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারীর কাছে জমা পড়া ৪৩ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মানসিকভাবে বিপর্যস্থ পাইলটের দিকভ্রান্ত ভূমিকা ও বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের ব্যর্থতার কারণেই নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার পেছনে ২০ অনুঘটক শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিশন সুপারিশ করেছে, স্বাস্থ্য বা মানসিক অবসাদের কারণে কোনো পাইলটকে দায়িত্ব পালনে বিরত রাখার ইতিহাস থেকে থাকলে তার লাইসেন্স নবায়নের আগে অবশ্যই স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পাইলট আবিদ এক নারী সহকর্মীর ব্যবহারে মানসিকভাবে বির্পযস্ত ছিলেন এবং রাতে তার ঠিকভাবে ঘুম হয়নি। তবে উড়োজাহাজের কোনো ত্রুটি পায়নি তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া, তদন্ত প্রতিবেদন বেবিচকের জন্য দুটি, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ১১টি এবং নেপালের সিভিল এভিয়েশনের জন্য দুটি সেফটি সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার সময় বিমানটি যিনি চালিয়েছেন, তিনি নিরাপত্তা গাইডলাইন লঙ্ঘন করে ককপিটে বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন। তিনি রাডার ব্যবহার করে রানওয়ে না দেখে বা যথাযথ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন না করেই বিমানটি অবতরণ করার উদ্যোগ নেয়। প্রতিবেদনে কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার ও ক্রুদের যোগাযোগের সমস্যাকেও দায়ী করা হয়েছে। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার তথ্য থেকে জানা গেছে, রানওয়ে ২ নাকি ২০-তে বিমানটি অবতরণ করবে, তা নিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ার ও বিমান কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়েছিল। ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে গত বছর ১২ মার্চ দুপুরে কাঠমান্ডুতে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১। আরোহীদের মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়, যাদের ২৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি। দুর্ঘটনায় পাইলট আবিদ সুলতান ও কোপাইলট পৃথুলা রশীদেরও মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর