শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সব কিছুতেই বিএনপির না

খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, সংসদে যোগদান, সরকারের সঙ্গে সংলাপ, উপজেলা ও সিটি নির্বাচন, ট্রাইব্যুনালে মামলাসহ সবখানেই না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব কিছুতেই বিএনপির না

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের পর বিএনপি এখন ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করছে। সবকিছুতেই যেন দলটি এখন ‘না’ কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, এখন পূর্ণ বিশ্রামই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এ কারণেই প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে থাকা দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজপথের কোনো কর্মসূচিতে নেই দলটি। বিএনপি অবশ্য ভোটে অংশ নেয় বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। ভোট বিপর্যয়ের পর বিএনপি রাজপথের কর্মসূচিতে নেই। দলের আইনজীবী নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। এজন্য উত্তপ্ত করতে হবে রাজপথ। তাকে ছাড়া বিএনপির ভোটে যাওয়া নিয়েও এখন প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

জানা যায়, শুধু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনই নয়, জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগদান, আসন্ন উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন, ভোটের অনিয়ম নিয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলা, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপ- সবকিছুতেই বিএনপি ‘না’ নীতি গ্রহণ করেছে। খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আইনের সাধারণ প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। এজন্য রাজপথ উত্তপ্ত করতে হবে। কারণ, বর্তমান সরকার সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। আইনের শাসন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় বের করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করছি না। তাই সময় এসেছে, জাতি উপলব্ধি করছে, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে আমরা নির্বাচন করেছি, সে নির্বাচন করা কতটা সঠিক হয়েছে। আমাদের নেতারা একদিন এর জবাব দেবেন। ইতিহাসও সেদিন কথা বলবে।’ সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দল ও জোটের আটজন এমপি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারা এখন পর্যন্ত শপথ নেননি। একাদশ জাতীয় সংসদে যাওয়ার ব্যাপারেও বিএনপি ‘না’ নীতিতে রয়েছে। অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের দুই নির্বাচিত নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও মুকাব্বির খান ব্যক্তিগতভাবে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়ে গণফোরাম জানিয়েছে, তাদের দুই সংসদ সদস্য পার্লামেন্টে যাবেন না। তার পরও বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। এদিকে আজ প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের গণভবনে বিকাল ৩টায় চা চক্রের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানেও যাচ্ছে না বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্ট স্টিয়ারিং কমিটির মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়। চা চক্রে অংশ না নেওয়ার চিঠি গতকাল গণভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে সামনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না বিএনপি। আসন্ন উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভোটকে কেন্দ্র করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২৭ জানুয়ারি গাইবন্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) উপনির্বাচনে প্রথমে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের জেলা সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমাও দেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। সদ্য সমাপ্ত ভোটের অনিয়ম ইস্যু নিয়ে আগামী দিনের দিকনির্দেশনা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করেছিল ঐক্যফ্রন্ট। বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিকে এ সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ নিয়ে হলও বুকিং দেওয়া হয়। কিন্তু সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, জাতীয় সংলাপ হবে না। তবে ওইদিন ‘ভোট ডাকাতি’র প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। ভোটে অনিয়ম ইস্যুতে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা নিজ নিজ সংসদীয় আসনে নির্বাচন কমিশনের গঠিত ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি জোট। সেই কর্মসূচি থেকেও সরে আসে তারা। এর পরিবর্তে ২৪ ফেব্রুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থী ও ভুক্তভোগী নেতা-কর্মীদের গণশুনানি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে একটি সংলাপ চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। ভেবেছিলাম, এই সংলাপ থেকেও কিছু সমাধান বেরিয়ে আসবে। ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিরা সংসদে যাবেন। আমরা সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করব। কিন্তু কোনোটাই হলো না। তা ছাড়া জাতীয় সংলাপে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি আসতেও ভয় পাচ্ছেন। এ কারণেই ওই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না। তবে আমরা নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলা করব। এখনো সময় আছে ১৪ দিনের মতো। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তারাও ভয়ে কাগজপত্র দিচ্ছেন না। সংসদীয় সব আসনে না হলেও বেশকিছু আসনে মামলা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর