রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সবার আগে দরকার নদীর অভিভাবক

ইকবাল হাবিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবার আগে দরকার নদীর অভিভাবক

নদী বাঁচাতে সবার আগে নদীগুলোর ‘অভিভাবক’ দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্মসম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীর্ঘদিন নদ-নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা এই স্থপতি বলেন, বাংলাদেশের নদীগুলোর কোনো অভিভাবক নেই। নেই একক কোনো কর্তৃপক্ষ। নদীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে দায়িত্ব নিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। অনেকটা ‘ঠেলাঠেলির ঘর, খোদায় রক্ষা কর’ অবস্থায় চলছে। এ কারণেই নদীগুলো বাঁচানো যাচ্ছে না। আর নদী না বাঁচলে বাংলাদেশও বাঁচবে না।

ইকবাল হাবিব বলেন, জরুরি ভিত্তিতে নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এটা করতে যত দেরি হবে ততই নদী উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে। সীমানা নির্ধারণ করে নদীর পাড়ে বনায়ন, হাঁটার রাস্তাসহ পাবলিক প্লেস করে দিতে হবে, যাতে ওই এলাকায় কেউ দখলে যেতে না পারে। নদী রক্ষায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক একটা রায় দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নদীর সীমানা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে রায়ের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ‘শুধু আইন করা নয়, এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে’ মন্তব্য করে ইকবাল হাবিব বলেন, তুরাগ নদের দখলদারদের চিহ্নিত করার পরও শাস্তি হয়নি। এমন হলে দখল-দূষণ বন্ধ হবে না। দূষণকারী ও দখলদারদের শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের চেহারা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। যারা নদীর ক্ষতি করছে প্রকাশ্যে তাদের তিরস্কার করতে হবে, যারা নদীকে ভালোবাসে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। সবার আগে নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান করতে হবে, যেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। নদী, খাল রক্ষায় ও সংরক্ষণে যত ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন তা নেবে। ‘আমার নদী আমাকেই বাঁচাতে হবে’ এমন চিন্তায় তারা কাজ করবে। অপরাধীদের শাস্তি দেবে, বিপরীত পক্ষকে পুরস্কৃত করবে। এরপর নদী দখল-দূষণের কবলে পড়লে ওই প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করতে হবে। ক্ষমতাধর একক প্রতিষ্ঠান থাকলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সহজে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ইকবাল হাবিব আরও বলেন, দখল উচ্ছেদ করে তিন-চার বছর খোঁজ না রাখলে আবার দখল হবে। দূষণ রোধে নদীর সীমানার ৫০ মিটারের মধ্যে শিল্প স্থাপন করতে দেওয়া যাবে না। শিল্পবর্জ্য যাতে নদী-খাল-বিলের পানি দূষিত করতে না পারে সে ব্যাপারে আইন বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। এ কাজগুলো সামগ্রিকভাবে করা দরকার। আমাদের পাউবো, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি যে যার কাজ করছে। সুনির্দিষ্টভাবে কারও ওপর নদী রক্ষার দায়িত্ব নেই বলেই নদীগুলো অভিভাবকহীন। তিনি বলেন, সম্প্রতি হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ ঢাকার পাশের তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা বলে ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ একজন মানুষের মতোই এ নদের ক্ষেত্রেও আইনি অধিকার স্বীকৃত হলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এমনটা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, নদ-নদী রক্ষা করতে গেলে নানা বাধা আসে। অতীতেও এসেছে। এগুলো বরদাশত করা হলে যত আইনই করা হোক কোনো লাভ হবে না।

সর্বশেষ খবর