রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
এসএসসি পরীক্ষা শুরু

চট্টগ্রামে সাত কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র

প্রশ্ন ফাঁসের অপচেষ্টা হলে ব্যবস্থা : শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে সাত কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র

বাংলা প্রথমপত্রে ভুল। গতকাল এই প্রশ্নপত্রই পেয়েছে পরীক্ষার্থীরা

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গতকাল এসএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র, এসএসসি ভোকেশনালে বাংলা-২ ও দাখিলে কোরআন মাজিদ ও তাজবিদ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে চট্টগ্রামে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে সাতটি কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। দেশের অনেক স্থানে ২০১৮ সালের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। মুদ্রণত্রুটিসহ আরও কিছু অব্যবস্থাপনাও লক্ষ্য করা গেছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে দেরিতে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। গতকাল রাজধানীর আশকোনায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের অপচেষ্টায় কেউ যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি কেউ অপচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হবেন না। প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত, নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য কঠোর ও তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই তৎপর রয়েছেন। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে সাত কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র : ভুল প্রশ্নপত্র দিয়েই চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাতটি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ২০১৯ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র অনুসারে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিবরা ভুলে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুসারে প্রণীত প্রশ্নে ২০১৯ সালের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করেন। কেন্দ্র সচিবদের এমন দায়িত্বহীনতায় চট্টগ্রামজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনের বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়া সাতটি পরীক্ষা কেন্দ্র হলো চট্টগ্রাম নগরের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চবিদ্যালয়, গরীবে নেওয়াজ উচ্চবিদ্যালয়, পতেঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় এবং কক্সবাজারের পেকুয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, উখিয়া পালং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও উখিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিভাবকরা বলেন, এত বড় পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় ভুল প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষার বিষয়টি গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন গাফিলতির দায় থেকে কেউ পার পেতে পারেন না। এতে শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিবদের কোনো সমস্যা না হলেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। এমন ভুলের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরীক্ষার্র্থীদের সামগ্রিক ফলাফলের ওপর। এমন ভুলের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামের সাতটি কেন্দ্র সচিবদের ভুলে প্রথম দিনের পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ভুল করা সাত কেন্দ্র সচিবদের এরই মধ্যে শোকজ করা হয়েছে। এতে এসব কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সে জন্য পরীক্ষা নেওয়া পরীক্ষার্থীদের রোল নম্বরসহ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বলেছি। পরীক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিষয় গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। তবে কেন্দ্র সচিবদের প্রশ্নপত্র দেওয়া থেকে নেওয়া পর্যন্ত সবকিছুতে সতর্ক থাকতে তাদের বারবার নির্দেশ দিয়েছি।

প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ১০ হাজার ৩৮৭ : গতকাল আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট ১০ হাজার ৩৮৭ জন ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম ও শিক্ষা বোর্ড সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গতকাল ৪ হাজার ৯৭৮ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৩ হাজার ৭৮৮ জন ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৬২১ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১৩ জন, মাদ্রাসা বোর্র্ডে ৬ জন ও আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট ৫ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার হয়েছে।

১০১৯ সালের সিলেবাসে পরীক্ষা : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলা প্রথম পত্রের এমসিকিউ প্রশ্নপত্রে নানা ভুল রয়েছে বলে জানান পরীক্ষার্থীরা। যেমন ২০১৯ সালে নেওয়া পরীক্ষার এ প্রশ্নপত্রে লেখা রয়েছে, ‘১০১৯ সালের সিলেবাস অনুযায়ী’। এক্ষেত্রে প্রশ্ন তৈরি ও মডারেশনে উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সৃজনশীল অংশের প্রশ্নটি ২০১৮ সালের দেওয়ায় পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন পরীক্ষার্থী বিষয়টি কক্ষ পরিদর্শকদের নজরে আনেন।

মুন্সীগঞ্জে পুরনো প্রশ্নে ৭৯ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা : মুন্সীগঞ্জে এ ভি জে এম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কে কে গভ. ইনস্টিটিউশন, বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও রামপাল এন বি এম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৭৯ জন পরীক্ষার্থী বাংলা প্রথম পত্রে পুরনো প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শেষে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জেলা প্রশাসকের বাসভবন ঘেরাও করেন। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এইচ এম রকিব হায়দার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। কেন্দ্র সচিব ও এ ভি জে এম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, এটি কক্ষ পরিদর্শকের ভুল। এ ছাড়া শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে দাখিল পরীক্ষায় তারাগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসায় পরীক্ষার্থীদের মাঝে ২০১৯ সালের প্রশ্নপ্রত্রের স্থলে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র প্রদান করা হয়। পরে বিষয়টি জানার পর দ্রুত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবগত করে পুনরায় আধাঘণ্টা পর নতুন প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়। কুমিল্লায় দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া এজি মডেল একাডেমি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পৌনে এক ঘণ্টা পর একটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের মাঝে রচনামূলক (সৃজনশীল) প্রশ্ন বিতরণ করার ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে এ খবর পেয়ে এলাকায় জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা কেন্দ্রের মূল ফটকে জড়ো হন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা ও কেন্দ্র সচিব মো. আবু সেলিম ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে অভিভাবকরা শান্ত হন।

রাতে পরীক্ষা দিল ৫১ এসএসসি পরীক্ষার্থী : ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে খ্রিস্ট ধর্মের সেভেনথ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট সম্প্রদায়ের ৫১ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী গতকাল রাতে প্রথম পরীক্ষা দিয়েছে। এরা সবাই মুকসুদপুর উপজেলার কেলগ মুখার্জী সেমিনারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জানা গেছে, এই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিধান মতে, শনিবার দিনের বেলায় লেখা নিষেধ। তাই ঢাকা বোর্ডের অনুমতিক্রমে জলিরপাড় জেকেএমবি মল্লিক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে তাদের পরীক্ষা সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে ৪টি পরীক্ষা তারা এভাবে রাতে দেবে।

 অন্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই ৫১ জন পরীক্ষার্থীকেও সকাল ৯টায় কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়েছে। তবে ওই কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে তাদের রাখা হয় এবং রাত ৯টার পর পরীক্ষা শেষে তাদের কেন্দ্র ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়। খ্রিস্ট ধর্মের ওই পরীক্ষার্থীরা জানায়, ধর্মীয় বিধান অনুসারে আমাদের শনিবার দিনের বেলায় কোনো কিছু লেখা নিষেধ। তাই বোর্ডের অনুমতিক্রমে চারটি শনিবার রাতে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা আনন্দিত। জলিরপাড় জেকেএমবি মল্লিক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র সচিব নির্মল কুমার সাহা জানান, ঢাকা বোর্ডের নির্দেশে আমরা এ বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ওই ৫১ জন পরীক্ষার্থীদের সকাল ৯টায় কেন্দ্রে প্রবেশ করে এবং রাত ৯টার পর পরীক্ষা শেষে বাইরে যেতে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর