মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী

নিরীহ জনগণ যেন হয়রানি নিপীড়নের শিকার না হয়

বিশেষ প্রতিনিধি

নিরীহ জনগণ যেন হয়রানি নিপীড়নের শিকার না হয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পদক পরিয়ে দেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের নিরীহ জনগণ যেন কোনো ধরনের হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের সমস্যা দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। তাদের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে। সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

গতকাল সকালে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক-জঙ্গি নির্মূল করি’। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ৩৪৯ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশকে আমরা সব সময় আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে দেখতে চাই। এজন্য পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ দেশমাতৃকার সেবায় সর্বদা পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে গণতন্ত্রবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, জনবিচ্ছিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালায়। সেই অশুভ শক্তি সারা দেশে হরতাল, অবরোধ, সহিংসতা, নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও, আগুনসন্ত্রাস, নিরীহ মানুষ হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের অপচেষ্টা চালিয়েছিল। সেদিন পুলিশ সদস্যরা পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা  রুখে দিয়েছিল।

পুলিশের সব দাবি পূরণের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর : ‘পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক জঙ্গি নির্মূল করি’ স্লোগানকে সামনে রেখে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ এর উদ্বোধনী দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মেডিকেল কোর, আজীবন পেনশন সুবিধা, ভাতা বৃদ্ধি, পুলিশ হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণসহ সাতটি দাবি তুলে ধরেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের বক্তব্য শোনার পর প্রায় সব দাবিই পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল ‘পুলিশ সপ্তাহ-১৯’ এর কল্যাণ সভায় এসব দাবি তুলে ধরেন পুলিশের কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত কল্যাণ সভাটি দুপুর  দেড়টায় শুরু হয়ে দুপুর আড়াইটায় শেষ হয়। সভায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। কল্যাণ সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সদস্যদের উত্থাপিত সব দাবিই মেনে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু আজীবন পেনশনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

কল্যাণ সভা শুরুর পর প্রথমেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল নাজমুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার দাবিটি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে পুলিশের অনেক সফলতা রয়েছে। কিন্তু পুলিশের কোনো ক্রীড়া কমপ্লেক্স নেই। তিনি একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী তার দাবি মেনে নিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য জমি দেখতে নির্দেশনা দেন সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মেডিকেল কলেজ, আরও এক লাখ জনবল, পৃথক পুলিশ বিভাগ, একাধিক আইজিপি পদ ও চিফ অব পুলিশ পদ সৃষ্টি করে সেটিকে ফোর স্টার জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নীত করার দাবিও ছিল পুলিশের। তবে সেগুলো নিয়ে কল্যাণ সভায় কোনো আলোচনা হয়নি।

এবারের পুলিশ সপ্তাহ পালন করা হবে ‘পুলিশ-জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক-জঙ্গি নির্মূল করি’। গতকাল থেকে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহ আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রথম দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ণাঢ্য বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর