মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে রাজপথে মমতা ব্যানার্জি

প্রতিদিন ডেস্ক

মধ্যরাতে রাজপথে মমতা ব্যানার্জি

সারদা ও রোজভ্যালি দুর্নীতির ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের জেরা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনীতি। সিবিআইয়ের কর্মকা-ের প্রতিবাদে গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে কলকাতার ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে টানা অবস্থান ধর্মঘট করে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গতকাল রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি অবস্থান ধর্মঘটে ছিলেন। সূত্র : এনডিটিভি, রয়টার্স, বিবিসি। গতকাল ভারতীয় সংবাদপত্রগুলোর সবচেয়ে বড় খবর ছিল, কলকাতার ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান নিয়ে সেখানেই রাত কাটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাকে প্রথমে রাস্তার ওপরে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। পরে পাশে মঞ্চ তৈরি হয়। মঞ্চের পাশেই তৈরি হয় একটি অস্থায়ী ছাউনি, সেটা মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্য। মমতা জানিয়ে দেন, গতকালের (সোমবার) বিধানসভার বাজেট ঘোষণার সময় তিনি অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন না। বাজেট পেশের আগে মন্ত্রিসভার যে বৈঠক করতে হয় তা তিনি মঞ্চের পাশে ওই ছাউনিতে বসেই সারবেন। বাস্তবে তিনি করেছেনও তাই।

এদিকে মমতার ধর্মঘটে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে রাতে নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগে যায়। তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকেও দেখা যায় সেখানে। গতকাল বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা রাজ্যের শহর-গ্রামে আন্দোলন, প্রতিবাদ সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করেছেন। আগের রাতেই তৃণমূলের সমর্থকরা হুগলির রিষড়া স্টেশন অবরোধ করেন। তারা বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভও করেন।

মমতার ঘোষণা : মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ভারতের সংবিধান এবং দেশ বাঁচানোর দাবিতে শুরু করা অবস্থান ধর্মঘট আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির পরও চলবে। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মঘট মঞ্চে মাইক বাজবে না।

মঞ্চেই মন্ত্রিসভার বৈঠক : ধর্মঘট মঞ্চের পেছনেই কলকাতা পুলিশের একটি আউটপোস্টে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় আধা ঘণ্টার বৈঠকে মূলত বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করার আগে মন্ত্রিসভার অনুমতি নিতে হয়; সেই জন্যই এই বৈঠক বলে জানায় আনন্দবাজার।

বৈঠকের পর মন্ত্রীরা বিধানসভায় যান। সেখানে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার আগে এই মঞ্চ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৃষক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। তিনি বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। নোট বাতিলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা, কৃষকদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে মোদি সরকার।

মমতাকে সমর্থন : মমতাকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুসহ অন্যরাও সমর্থন দিয়েছেন। অবস্থান ধর্মঘট থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মমতা। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, রবিবার রাতে মমতাকে ফোন করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘এই লড়াই আমাদের সবার। আমি আপনার পাশে আছি। যে কোনো মূল্যে মোদি সরকারের আগ্রাসনকে রুখতে হবে।’ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মমতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব প্রমুখ। তারা বলেছেন, মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলনে মমতার পাশে আছেন, থাকবেন।

উত্তাল সংসদ : সিবিআই-পুলিশ সংঘাত নিয়ে গতকাল উত্তাল ছিল ভারতীয় সংসদও। সেখানে একযোগে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বিরোধীরা। তৃণমূল সংসদ সদস্যদের বিক্ষোভের জেরে বেলা ২টা পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হয় রাজ্যসভা। পাশাপাশি লোকসভাতেও বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সংসদ সদস্যরা। তৃণমূলের বিক্ষোভের জেরে মুলতবি হয়ে যায় লোকসভাও।

সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার : উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গতকাল সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। বলা হচ্ছে, পুলিশ কমিশনার রাজিব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এজন্য প্রস্তুত রাজ্য সরকারও।

সিবিআই দফতরের নিরাপত্তায় সিআরপিএফ : পুলিশ গত রবিবার রাতেই আটক সিবিআই কর্মকর্তাদের ছেড়ে দিয়েছে। তবে এ ঘটনায় সিবিআইতে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। ওই রাত থেকেই কলকাতার সিবিআই দফতরের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ নিয়োগ করা হয়েছে। সিবিআই কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে গতকাল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছে। অন্যদিকে কলকাতার পুলিশও এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিজেপি বসে নেই : বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় গতকাল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে তাদের সভা করতে দিচ্ছে না। বাধা দিচ্ছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রকাশ জাভরেক অভিযোগ করেন, তৃণমূল দুর্নীতি মামলার তদন্ত বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণ তা মানবে না।

সর্বশেষ খবর