শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

জ্ঞানপ্রতিবন্ধীরা বই পড়েন না

মারুফ রায়হান

জ্ঞানপ্রতিবন্ধীরা বই পড়েন না

বাতাসে ধুলো ও স্টল নির্মাণ সামগ্রীর বিচিত্র সূক্ষ্ম কণা এবং নিচে খানাখন্দে ভরা অসমান চলার পথের বিড়ম্বনা আর ঝুঁকি নিয়ে আমরা যারা প্রথম দিনই বইমেলায় যাই, তারা আসলে কী চাই? প্রথমত আমরা সদ্য জন্মগ্রহণকারী বইকেই ভালোবাসা জানাতে চাই, চাই বইয়ের মুখদর্শন, স্পর্শসুখ ও আশ্চর্য সুঘ্রাণ। সেই সঙ্গে যাঁরা বইয়ের জনক, লেখক-সাহিত্যিক তাঁদের একঝলক চোখের দেখা পাওয়ার বাসনাও থাকে নেপথ্যে। মাসব্যাপী এমন অনন্য মেলায় বইয়ের টানে আসেন সব কটি জেলা শহরের মানুষ, এমনকি প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালিজনও। অথচ ঢাকায় থেকেও লাখ লাখ সক্ষম (শারীরিক-অর্থনৈতিক বিচারে) ‘শিক্ষিত’ মানুষ বইমেলায় আসেন না, তাঁরা বই পড়েন না। তাঁরা কি সব সুখী জড়প্রাণ! আমি তাঁদের আজ নতুন নাম দিলাম- জ্ঞানপ্রতিবন্ধী। জ্ঞানের তৃষ্ণা তাঁদের নেই, জ্ঞান তাঁরা এড়িয়ে চলেন বা বলতে পারি, জ্ঞানের সান্নিধ্যে তাঁরা অস্বস্তি বোধ করেন। যাক সে কথা। এবার মেলা খানিকটা ইতিবাচক বাঁক নিয়েছে। মেলায় জায়গা বেড়েছে এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে স্টল বিন্যাসের ফলে মেলা সারি সারি বইয়ের দোকান হয়ে ওঠেনি। তাই আশা করছি বইয়ের পাঠক-ক্রেতা কিছুটা স্বস্তিভরে মেলার বইগুলোর সংস্পর্শে আসতে পারবেন; বই বেছে নেওয়ার অবকাশ পাবেন। বইমেলার সময়ে গণমাধ্যম উদার ভূমিকা পালন করে থাকে, বাছবিচারহীন বইয়ের প্রচার দেয়। কিন্তু মানসম্পন্ন ও প্রয়োজনীয় বই কোনগুলো, সে ব্যাপারে পাঠক থাকেন অন্ধকারে। আমরা একুশের সংকলনের পক্ষ থেকে প্রতি বছর বইমেলায় প্রকাশিত হাজার হাজার বই থেকে ৫০টি বই নির্বাচন করে তার পরিচিতিমূলক রঙিন পুস্তিকা ছাপিয়ে মেলায় বিনামূল্যে বিতরণ করি। পাঠক অংশত হলেও বইয়ের ক্রয়নির্দেশিকা হিসেবে এটিকে ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছেন। মেলার উত্তরদিকে স্বাধীনতাস্তম্ভ ও একটি জলাশয় রয়েছে। এবারই প্রথম বইমেলার সঙ্গে এগুলোর সংযোগ তৈরির প্রয়াস লক্ষ্য করলাম। মেলায় দর্শনার্থীরা সেই জলাশয়ের পাশে বসতেও পারছেন। সুপরিসর উদ্যানে শত শত স্টলে ঘুরতে ঘুরতে পদযুগল নিশ্চয়ই বিশ্রামের অবকাশ খোঁজে। একুশের বইমেলা নিয়ে শিক্ষিত-শিক্ষাবঞ্চিত সবার ভিতরেই বিশেষ আবেগ কাজ করে। বই হলো জ্ঞান ও আনন্দের ভান্ডার, তাই বইমেলার আয়োজন সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হোক, তার প্রচেষ্টা থাকে সব পক্ষেরই। এ কথা আমাদের বারবার বলতে হবে যে, বই হলো অনন্য পণ্য, যা নিবেদিত হয় মহাকালের উদ্দেশে। তাই কালের মহার্ঘ্য হতে হলে তাকে হতে হয় যোগ্য, সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ এবং সুচারুরূপে প্রকাশিত। সে কারণেই পান্ডুলিপি উত্তমরূপে সম্পাদনা ও গ্রন্থ মুদ্রণপ্রমাদমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু কয়জন গ্রন্থ উৎপাদক বা প্রকাশক এই শর্তগুলো পূরণ করেন? লেখকও কি সবসময় তাঁর পান্ডুলিপির ওপর সুবিচার করেন? লেখক : কবি ও সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর