মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদের আমলনামা

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়নে মন্ত্রিসভার মতোই চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের ৪৩ জনের ৪১ জনই নতুন মুখ। পারিবারিক ঐতিহ্য, দলের জন্য ত্যাগসহ নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তৃণমূল থেকে খুঁজে খুঁজে বের করে এবং রাজপথের কর্মীদের বের করে যেমন নিয়ে এসেছেন, তেমনি শিল্পীদের মধ্য থেকে সুর্বণা মোস্তফাকে এবং আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তানদের ঠাঁই দিয়েছেন। শুক্রবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল নামের তালিকা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা থেকে এবার দুজন নারীকে সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একজন আরমা দত্ত। তিনি নিজে মানবাধিকারকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা। তার দাদা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। আরমা দত্তকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার পরিবারকে ও তাকে সম্মানিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আরেকজন হচ্ছেন আঞ্জুম সুলতানা। তিনি কুমিল্লার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের মেয়ে। গত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আঞ্জুম সুলতানাকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী করা হয়েছিল। দলীয় কোন্দলের কারণে জিততে পারেননি তিনি। এবার কুমিল্লা সদর থেকে সরাসরি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন আঞ্জুম। সরাসরি আসনে তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হলেও সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দিতে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী।

টাঙ্গাইল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন অপরাজিতা হক জিতু। তিনি সাবেক এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের মেয়ে। বয়সের কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাননি আসাদুজ্জামান। তার ছেলে খোন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলকে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর আবার প্রার্থী বদল করা হয়। ভাইকে বঞ্চিত করা হলেও বোন অপরাজিতা হক জিতুকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুর থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বর্ষীয়ান রুশেমা ইমামকে। তিনি কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেননি। তার স্বামী প্রয়াত ইমাম উদ্দিন আহমাদ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফেরদৌসী ইসলাম জেসিকে এমপি করা হয়েছে। জেসি আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাবা ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু ছিলেন ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি এমপিও ছিলেন।

নেত্রকোনা থেকে দুজনকে এমপি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের স্ত্রী জাকিয়া পারভীন খানম। জাকিয়া পারভীন পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রী ছিলেন। বর্তমানে যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি। আরেকজন হাবীবা রহমান শেফালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমানের মেয়ে। তিনি নিজেও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা।

কক্সবাজার থেকে মনোনয়ন পাওয়া কানিজ ফাতেমা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান বাহাদুর মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর স্ত্রী। মাদারীপুরের তাহমিনা বেগম ১৯৭৯ সাল থেকে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কালকিনি সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানও ছিলেন এই নারীনেত্রী।

মৌলভীবাজার থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন। তিনি মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি জেলা মহিলা সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান। ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। নাজমাকে দশম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় কোন্দলে তার স্বামী সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইকবাল আজাদ ২০১২ সালে খুন হয়েছিলেন।

নরসিংদী থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তামান্না নুসরাত। নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী। লোকমান হোসেন নরসিংদীতে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে দলীয় কার্যালয়ে ২০১১ সালে খুন হন লোকমান হোসেন।

বরিশাল থেকে এমপি করা হয়েছে রুবিনা আকতার মিরাকে। তিনি সাবেক ছাত্রনেতা মোশাররফ হোসেন রাজার স্ত্রী। মিরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন এবং এক-এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন।

নাটোর থেকে এমপি করা হয়েছে রত্না আহমেদকে। তিনি জেলার প্রবীণ নেত্রী। মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলার সভাপতি।

বরগুনা-২ আসনের সাবেক ্এমপি গোলাম সবুর ২০১৩ সালে ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এবার তার স্ত্রী সুলতানা নাদিরা সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার ছোট ভাই নয়িম খান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে শহীদ হন।

শরীয়তপুর থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন পারভীন হক সিকদার। তার বাবা সিকদার গ্রুপের জয়নুল হক সিকদার। পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকেই তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার।

পিরোজপুর থেকে এমপি করা হয়েছে শেখ এ্যানি রহমানকে। তিনি পিরোজপুর-১ আসনে গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ্যানি রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই শেখ হাফিজুর রহমানের স্ত্রী। হাফিজুর রহমান বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্যসচিব।

গাজীপুর থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী। রহমত আলী দীর্ঘদিন ধরেই গাজীপুর-৩ আসনের এমপি ছিলেন। এবার এ আসনে তাকে বাদ দিয়ে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। রহমত আলীর ছেলে জামিল হাসান চেষ্টা করেছিলেন।

কুষ্টিয়া থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দা রাশিদা বেগম। তার স্বামী প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দীন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন শিরিনা নাহার লিপি। তিনি বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম সজলের স্ত্রী। তার পরিবর্তে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে টাঙ্গাইলের মেয়ে মমতা নেহা লাভলীকে। তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভিপি সুভাস সিংহ রায়ের স্ত্রী। নেহা যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সর্বশেষ খবর