বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঝুলছে সাড়ে ৩৫ লাখ মামলা

বছরে জট বেড়েছে দুই লাখ ♦ নিষ্পত্তির চেয়ে বেশি মামলা দায়ের

আরাফাত মুন্না

ঝুলছে সাড়ে ৩৫ লাখ মামলা

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ-পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান। ওই হামলায় তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন ৭০ জন। ঘটনার পরদিন আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। এরপর কেটে গেল ১৪ বছর। শেষ হলো না বিচার। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন এ মামলাটি ৯০ কার্যদিবসে নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও ৩২১ কার্যদিবসেও সুরাহা হয়নি। শুধু কিবরিয়া হত্যা মামলাই নয়। রমনা বটমূলে বোমা হামলা, শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলাসহ অনেক চাঞ্চল্যকর মামলাই নিষ্পত্তির অপেক্ষায় দেশের বিভিন্ন আদালতে। এতে বিচার প্রার্থীদের অর্থ ও সময় দুটোই নষ্ট হচ্ছে। উচ্চ আদালতসহ দেশের সব আদালতে ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫০টি। শুধু ২০১৮ সালেই জটের তালিকায় যুক্ত হয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ২৫০টি মামলা। সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করা মামলার পরিসংখ্যান প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। শিগগিরই এ প্রতিবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে সারা দেশে মামলা নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক বেশি ছিল। তবে মামলা দায়ের অন্য বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় জটও বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উচ্চ আদালতে (আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট) বিচারাধীন মামলা পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪টি। এর মধ্যে আপিল বিভাগে ২০ হাজার ৪৪২টি এবং হাই কোর্টে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৬৫২টি মামলা বিচারাধীন। ২০১৭ সালের শেষ দিন পর্যন্ত আপিল বিভাগে ১৬ হাজার ৫৬৫টি এবং হাই কোর্টে চার লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০টি মামলা বিচারাধীন ছিল। বিচারক স্বল্পতাসহ নানা কারণে গত বছর উচ্চ আদালতে জট বেড়েছে ৪৩ হাজার ৭৭৯ মামলা।

এদিকে নিম্ন আদালতে (জেলা ও দায়রা জজসহ সব ধরনের ট্রাইব্যুনাল) গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলা ছিল ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬টি। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮টি ও ফৌজদারি ১৭ লাখ ১১ হাজার ৬১৮টি। এর আগের বছর ২০১৭ সালে দেশের নি¤œ আদালতে বিচারাধীন মামলা ছিল ২৮ লাখ ৬১ হাজার ১৮৫টি। পরিসংখ্যান বলছে, নি¤œ আদালতে গত বছরই মামলা জট বেড়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৪৭১টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর দেশের আদালতগুলোতে মামলা দায়ের হয়েছে চার লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪টি। আর নিষ্পত্তি হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ১৩১টি মামলা। মামলা জটের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জট কমাতে সুপ্রিম কোর্ট নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচারকদের আদালতে পূর্ণ কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। মামলা দায়েরের হার বৃদ্ধি এবং নিষ্পত্তির হার কমার কারণ বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি জোরদার করা হয়েছে। জেলা জজদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি আপিল বিভাগে এ বছর আরও একটি বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। চলতি বছরে এর সুফল মিলবে বলে আশা করা যাচ্ছে। জানতে চাইলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারপ্রার্থীরা দ্রুততম সময়ে ন্যায়বিচার চান। তবে আমাদের আদালতের পক্ষে মানুষের সেই আশা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটি দুর্ভোগের নাম  ‘মামলাজট’। তিনি বলেন, এই দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পেতে এখন সাধারণ মানুষের উচিত যতদূর সম্ভব মামলা দায়ের না করা। মামলার পরিবর্তে বিকল্প বিরোধ পদ্ধতিতে (এডিআর) সব ঝামেলা নিষ্পত্তি করলে একদিকে আদালতে যেমন মামলার চাপ কমবে, ঠিক একইভাবে বিচারপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর