একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া-না চাওয়া, জোটপ্রধান বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা-না রাখা এবং নতুন দল গঠন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীতে অস্থিরতা এখন চরমে। দলটির একধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নতুন দল গঠন হলেও পুরনো দল বিলুপ্ত হবে না। নিয়ন্ত্রণ থাকবে পুরনোদের কাছেই। নতুন দল হলেও নীতি-কর্মপন্থা আগেরই থাকবে। একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইবে না তারা। ইতিমধ্যে নতুন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, দলে অনেক প্রস্তাব ও আলোচনা থাকে। নতুন দল গঠন বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত থাকলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। সূত্র জানায়, নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে যে কমিটি করা হয়েছে, তাতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগে জামায়াতের সর্বত্র নাড়া পড়েছে। এ কারণেই দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা জারি করতে হয়েছে। আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং মজিবুর রহমান মঞ্জুর বহিষ্কারের পর দলের সব স্তরের জন্য একটি দৃষ্টি আকর্ষণী নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় জামায়াত। এতে বলা হয়েছে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের গত ১৪ জানুয়ারি অধিবেশনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্যদের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। শূরা সদস্যদের মতামত পর্যালোচনার পর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা প্রদত্ত এখতিয়ারের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদে সুনির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য সম্মানিত সেক্রেটারি জেনারেলের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি কার্যক্রম শুরু করেছে। জামায়াতের দাবি অনুযায়ী এক মাস আগে নতুন দল গঠনে কমিটি হলেও তা এখন কর্মীদের জানাতে হচ্ছে। যাতে কর্মীরা সংস্কারপন্থিদের দিকে না ভিড়েন। দলে যেন ভাঙন না ধরে। ভাঙনের ভয় থেকে আবদুর রাজ্জাকের মতের অনুসারীদের ‘শান্ত’ রাখতেই কমিটির খবর তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জন্য নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক দল ছাড়লেও তার অতীতের সব অবদানকে সম্মানের চোখে দেখে জামায়াত। তাকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। পদত্যাগ করলেও এ খবর গণমাধ্যমে না দিতেও অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে তিনি এসব অনুরোধ উপেক্ষা করেছেন। বিষয়টি জামায়াতের জন্য দুঃখজনক। তার পরও আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে বিরূপ কোনো মন্তব্য না করতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত আমিরে জামায়াত, সেক্রেটারি জেনারেল, আঞ্চলিক দায়িত্বশীল, জেলা ও মহানগর আমিরদের মাধ্যমে যথাসময়ে সরাসরি জানানো হবে। এর বাইরে কারও আবেদন, নিবেদন ও অনুরোধে সাড়া না দিতে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করা হয়। সূত্র জানায়, ৯ বছর ধরে চলা ধরপাকড় এবং সরকারের দমনপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন নামে দল গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব আসে। জামায়াত নিষিদ্ধ হবে- এ আশঙ্কা থেকেই দলের নির্বাহী পরিষদ নতুন একটি সংগঠন গড়ে তোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামায়াতের নতুন উদ্যোগের প্রত্যাশায় থাকা নেতারা বলছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে ক্ষমা চাওয়া একটি বিবেচ্য বিষয়। ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতাদের মান ও মর্যাদা যুক্ত। ক্ষমা চাইলে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশা ছিল, জামায়াতের হাইকমান্ড নতুন সংগঠনের যাত্রা শুরু করবেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে মজলিসে শুরার সদস্যরা নতুন নামে সংগঠন করার বিষয়ে মতামত দিলেও তা প্রকাশ পায় এ মাসে। এখানেই দলের পরিবর্তন প্রত্যাশীদের প্রশ্ন। এদিকে নতুন নামের প্রস্তাব ও জামায়াতকে মূল সংগঠন হিসেবে ঠিক রেখে নতুন সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে মজলিসে শুরার একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন। কোনো কোনো নেতার ভাষ্য ছিল, চলতি বছরেই নতুন সংগঠনের দেখা মিলতে পারে।