বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ভাষা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়া আমাদের কর্তব্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাষা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়া আমাদের কর্তব্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ‘একুশে পদক প্রদান-২০১৯’ অনুষ্ঠানে ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে পদক তুলে দেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে।  মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, মাতৃভাষা যেন হারিয়ে না যায়, তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাও সংগ্রহ এবং গবেষণার কাজ শুরু করা হয়েছে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একুশে পদকপ্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তার আগে পদকপ্রাপ্ত ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে তিনি পদক, সম্মাননা ও চেক তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একুশ আমাদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছে। আর এখান থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যায় বাঙালি জাতি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতির পর সরকার বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমাদের সৌভাগ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। আমরা আবার সরকারে আসি। এরপর সেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণ করি। সেখানে এখন গবেষণা চলছে। পৃথিবীর বিভিন্ন মাতৃভাষার নমুনা, এমনকি হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষার নমুনা সংগ্রহেরও কাজ চলছে। একুশে পদকপ্রাপ্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা একুশে পদক পেয়েছেন, তারা গুণীজন। তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান। দেশ-জাতি-ভাষায় তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা সবসময় আমরা স্মরণ করি। আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম তাদের অনুসরণ করে নিজেদের গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি যেন বিশ^সভায় মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এইটুকুই চাই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করেন। তুলে ধরেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে উঠে আসা ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। আমি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সরকার প্রধান হিসেবে যতবার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি, প্রতিবারই বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টি, এটাকে রক্ষা করা, চর্চা করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা, এটা আমাদেরই কর্তব্য। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের পরিচালনায় সংস্কৃতি সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বক্তৃতা করেন।

একুশে পদকপ্রাপ্তরা হলেন : জাতীয় ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে একুশে পদক দেওয়া হয়। পদক বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিজ নিজ পদক গ্রহণ করেন এবং মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্তদের তাদের স্বজনরা পদক গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন, ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক হালিমা খাতুন (মরণোত্তর), আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু ও অধ্যাপক মনোয়ারা ইসলাম, ভাষা সাহিত্যে ইমদাদুল হক মিলন, রিজিয়া রহমান, অসীম সাহা, আনোয়ারা  সৈয়দ হক, মঈনুল আহসান সাবের ও হরিশংকর জলদাস, সংগীতে সুবীর নন্দী, আজম খান (মরণোত্তর) ও খায়রুল আনাম শাকিল, অভিনয়শিল্পে লাকী ইনাম, সুবর্ণা মুস্তাফা ও লিয়াকত আলী লাকী, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য, গবেষণা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, ড. মাহবুবুল হক ও ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া এবং শিল্পকলার চারুকলা ও আলোকচিত্রে সাইদা খানম ও জামাল উদ্দিন আহমেদ।

সর্বশেষ খবর