শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভাষা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের ধারা কেউ বন্ধ করতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়নের ধারা কেউ বন্ধ করতে পারবে না

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখনই বাঙালি একটু সুযোগ পায়, তখনই একটা আঘাত আসে। বাংলাদেশের জনগণ ভালো থাকলে কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। দেশে যদি কোনো মার্শাল ল’ জারি হয়, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে, তখন তারা খুব শান্তিতে থাকে। কারণ, তারা ক্ষমতার বাতাস পায়। সে আশায় তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচনের   সময় তারা ৩শ সিটে ৯শর কাছাকাছি মানুষকে নমিনেশন দেয়। যে যখন যাকে পেয়েছে তাকেই নমিনেশন দেয়। বিএনপি-জামায়াত তাদের সিট অকশনে (নিলাম) দেয়। যে যত টাকা দিচ্ছে, সে নমিনেশন পাচ্ছে। যে টাকা দিতে পারছে না, তার নমিনেশন ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছে। যারা সিট অকশনে দেয়, যাদের দিলে সিট পেত তাদের নমিনেশন দেয়নি। আবার বিদেশেও কাউকে কাউকে নমিনেশন দিয়েছে। যারা নির্বাচন নিয়ে ব্যবসা করেছে, বাণিজ্য করেছে, অকশনে দিয়েছে, তারা নির্বাচনে জেতার স্বপ্ন দেখে কীভাবে? বিশেষ করে নিবন্ধনহীন জামায়াতকে নমিনেশন দেওয়ায় দেশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীরকে এ দেশের মানুষ ভোট দেবে না, দেয়নি। একদিকে যুদ্ধাপরাধী, অগ্নি সন্ত্রাসী, আবার নির্বাচন নিয়ে ব্যবসা করেছে তারা কোথা থেকে ভোট পাবে?

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা শহীদ, একাত্তরের শহীদ, জাতির জনক ও তার পরিবারের শহীদসহ চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে  নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কবি ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ প্রমুখ। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে যে অগ্নি সন্ত্রাস বিএনপি করে গিয়েছিল, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে তাদের জঙ্গিবাদী আচরণ, আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছিল, সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো মানুষ ভুলে যায়নি। কাজেই মানুষ তাদের ভোট দেবে কেন? এখন দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। আর তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ২০১৩-১৪-১৫ সালে প্রায় তিন হাজার ৮-৯শ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। ৫শ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। এখনো অনেক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের প্রতি সহানুভূতি কারও দেখি না। তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, রাস্তা কেটে ফেলেছে। রেললাইন উপড়ে ফেলেছে। সে কারণে মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। এ অত্যাচার ঠিক একাত্তুরে হানাদার বাহিনীর অত্যচারের মতো। আওয়ামী লীগের দুজন এমপিকে হত্যা করা হয়। আইভী রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ২৮টি আসন পায়। এটা অনেকেরই মনে নেই। সে নির্বাচনে ৮৬ ভাগ ভোট পড়েছিল।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে বাংলা ভাষা নিয়ে কথা হচ্ছে, বিএনপির চরিত্র কী তা দেশবাসীর জানা উচিত। ১৪০০ সালকে বরণ করে নিতে কবি সুফিয়া কামালকে প্রধান করে উদযাপন কমিটি করলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। আমাদের শতাব্দী পালনের অনুষ্ঠানে বাধা দিল। অনুষ্ঠান করতে দেবে না। মানুষ বাধা উপেক্ষা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে গেল। অস্থায়ী ট্রাকে মঞ্চ করে অনুষ্ঠান করলাম। বাঙালি জাতি বাধা মানে না। খালেদা জিয়া বাধা দিয়ে কাউকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলাম বলেই উন্নয়ন করতে পেরেছি, দেশ বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের কাছে সম্মান, মর্যাদা পেয়েছে। ক্ষুধা দূর করেছি। এখন দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই।

অগ্নিদগ্ধদের দেখতে আজ হাসপাতালে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে  আহতদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিডিনিউজ জানায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত রোগীদের খোঁজ-খবর নিতে যাবেন।

 

 

সর্বশেষ খবর