রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দায় এড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে সরকার

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের মতে, সেবাসংস্থার ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণে ঢাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এখানে একক কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যাকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মধ্যে আনা যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাইরে প্রতিটি সিটি মেয়রের বহু দায়িত্ব থাকে। কিন্তু ঢাকা সিটি মেয়রের হাতে ক্ষমতা নেই। নগরীর সব বিষয় তদারকির জন্য যদি সিটি করপোরেশনকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করা হতো, তা হলে তাকে দায় দেওয়া যেত। নিমতলীর ভয়াবহ ঘটনার পরও কেন একইরকম ঘটনা চকবাজারে ঘটল বা কেন এত বছরেও রাসায়নিক গুদাম সরানো হলো না- এসব মেয়রকে জিজ্ঞাসা করা যেত। কিন্তু সমন্বয়হীনতা থাকায় সবাইকেই একে অপরের ওপর দায় চাপানোর সুযোগ করে নিচ্ছে। নিমতলী ও চকবাজার অগ্নিকাে র মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়াতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন নাগরিক সেবা একক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। সরকারকে বিষয়টা ভাবতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বিভিন্ন সেবা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকলেও তা তদারকির দায়িত্ব একটি প্রতিষ্ঠান ও একজন মানুষের হাতে থাকা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা নগরপিতার হাতেই থাকে। আমাদের এখানে সেটা না থাকায় আজ অগ্নিকাে র দায় কেউ নেবে না। রাসায়নিক গুদাম না সরানোর ব্যাপারে একে অন্যের ওপর দায় চাপাবে। কারণ নিমতলী ও চকবাজার দুর্ঘটনা একই সরকারের আমলে ঘটেছে। নিমতলী দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দুটি মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। তার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পুনর্বাসনের ব্যাপারে কমিটির দায়িত্বে থাকা ফায়ার ব্রিগেডের তৎকালীন ডিজি বাড়ির মালিক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক সবাইকে নিয়ে বসেছিলেন। বোঝানোর পর প্রত্যেক ব্যবসায়ী ওই সময়ই নদীর ওপারে যেতে রাজি হয়েছিলেন। সব কিছুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও কেন রাসায়নিক গুদামগুলো সরল না। তাহলে কি সরকারের ভিতরে আরও কিছু লোক আছে যারা সরকারের স্বদিচ্ছাকে ধ্বংসের চেষ্টা চালায়! স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পুরান ঢাকায় শুধু অগ্নিকাে র ঝুঁকিই নয়, ভবনগুলোও পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। অনেকেই ফাটল ধরা ভবনে কোনো রকমে প্লাস্টার করে বসবাস করছেন, ভাড়া দিচ্ছেন। ছোটখাটো ভূমিকম্পেও এখানে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটতে পারে। ভবনমালিকরা আবাসনের অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন। বেশি টাকার জন্য রাসায়নিক গুদাম হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। এটা নিয়মবহির্ভূত। এগুলো দেখার দায়িত্ব রাজউকের। ওইসব ভবন ভেঙে ফেলার অধিকার আছে রাজউকের। কিন্তু রাজউক সেদিকে নজর না দিয়ে ফ্ল্যাট বানিয়ে বিক্রির ব্যবসায় নেমেছে। প্রশ্ন করলে বলছে, তাদের জনবলের অভাব। যার যেটা দায়িত্ব সেটা না করে অন্য কাজ করলে সমন্বয়হীনতা তো হবেই। তিনি বলেন, বারবার দেখছি পানির অভাবে আগুনা নেভানো যাচ্ছে না। ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম একটি শহর যার চার পাশে নদী আছে। তাহলে পানি নেই কেন? কলকাতা ব্রিটিশ আমলে বিভিন্ন গলিতে ওয়াটার হাইড্রেন্ট লাগিয়েছে। আমরা কেন পারছি না? আমাদের সেই ব্যবস্থা থাকলে আজ আগুন নেভাতে এত বেগ পেতে হতো না।

সর্বশেষ খবর