রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

ড. নাজনীন আহমেদ

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে দায় যে কোনো পরিমাণেই হোক সরকারের ওপর পড়ে। তবে এখন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতি প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আসলে কাজ কী বা দায় এড়ানোর সুযোগ আছে কিনা সেটা জানতে হবে। কেন শুধু রাষ্ট্রই ক্ষতিপূরণ  দেবে, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কেন ক্ষতিপূরণের  আওতায় আসবে না, তা জানার সময় এসেছে। চকবাজার ট্র্যাজেডি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে গতকাল আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। ড. নাজনীন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা বিআইডিএসের সিনিয়র ফেলো। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো আসলে কার জন্য? তারা কি শুধুই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখার জন্য? ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে জনগণকে এ ধরনের হুমকিতে পড়তে দেওয়া কি তাদের কাজ? বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠান বা অধিদফতরের প্রতি নানা ধরনের অভিযোগ করার সুযোগ আছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা বা জনবলের ঘাটতি থাকাটা একেবারে অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। দুর্বলতা দূর করতে সরকারের চেষ্টা আছে এবং করছে। এসব ঘাটতি পূরণে সরকারের ওপর আমাদের চাপও আছে। কিন্তু আমরা কখনই ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দায় নিয়ে প্রশ্ন তুলি না। কোথাও আগুন লাগলে বা অন্য কোনো আপদে-বিপদে রাষ্ট্র কেন সব সময় সব দায় নেবে? এত এত টাকা নিয়ে কারবার করা, এত এত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কি কোনো দায়িত্ব  নেই? তিনি বলেন, যারা কেমিক্যাল ব্যবসা করেন তাদের সমিতি আছে, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের আলাদা সমিতি আছে। তারা কি জানেন না কার কোথায় কেমিক্যালের গোডাউন আছে? তারা যখন সমিতিতে সদস্য হিসেবে কোনো ব্যবসায়ীকে রেজিস্টার করেন তারা কি কোনো খোঁজখবর নেন না? যদি বলেন আন-রেজিস্টার্ড তাও তো তাদের খোঁজখবর করাটা দায়িত্ব। ড. নাজনীনের মতে, এখন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা এবং তাদের ম্যান্ডেটের বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। ভবিষ্যতে যে কোনো দুর্ঘটনার বিষয়ে তাদেরকে দায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এফবিসিসিআই, ডিসিসিআইর মতো বড় চেম্বারগুলোর ম্যান্ডেট কি কেবল ট্যাক্স কমানো নিয়ে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করা? নাকি সংগঠনের কেউ কোনো ধরনের উল্টাপাল্টা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা সংগঠনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? সংগঠনের সুনাম রক্ষার জন্যই তো তাদের সদস্যদের কর্মকা  তদারকি করা প্রয়োজন। ড. নাজনীন আহমেদের পরামর্শ, কমিউনিটি পুলিশের মতো একটি সামাজিক সংগঠন গড়া যেতে পারে, যাদের কাজ হবে কেমিক্যাল বা অতি দাহ্য পদার্থের বেআইনি গুদামজাতের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে। স্থানীয় প্রশাসন বা ওয়ার্ড কাউন্সিলের একজন দায়িত্বশীল থাকবে এসব তথ্য যথাসময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ফায়ার সার্ভিস বা প্রশাসনকে জানাবে। স্থানীয় জনগণের পক্ষে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করলে সরকারের সহযোগিতায় স্থানীয় এ ধরনের উদ্যোগ দেশকে বাঁচাতে পারে ভবিষ্যৎ বিপদ থেকে।

সর্বশেষ খবর