সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমান ছিনতাই চেষ্টার পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। দীর্ঘদিন থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা নিরাপত্তা নিয়ে সিভিল এভিয়েশনকে সতর্ক করে আসছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি স্থাপন     সম্ভব       হয়নি। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মানুষের শরীর হাতিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করা হয়। বিশ্বমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তা এখনো করা যায়নি। শুধু শাহজালাল নয়, দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে ইয়াবা আদান-প্রদানও ধরা পড়েছে বিভিন্ন সময়। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো অনেকটাই অরক্ষিত বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, জেএফকে, হিথ্রো, দুবাই, ইস্তাম্বুলসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিক বিমানবন্দর এখন রেড লেবেলের নিরাপত্তা বজায় রাখে। কোনো ধরনের ঝুঁকি এ বিমানবন্দরগুলো নেয় না। আধুনিক নিরাপত্তাবলয়ের মাধ্যমে পণ্য ও মানুষের চলাচল পর্যবেক্ষণ করা হয়। সামান্যতম সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে এ বিমানবন্দরগুলো। জেএফকে ও দুবাই বিমানবন্দরে অটোমেটিক স্ক্যানারে পুরো শরীরের তল্লাশি হয়। নিরাপত্তার জন্য সজাগ রাখা হয় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুর। লাগেজ ও যাত্রীদের সন্দেহ হলেই কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। যত দিন যাচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থারও আধুনিকায়ন হচ্ছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশের শাহজালালসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে আদিম যুগের নিরাপত্তা তল্লাশি ব্যবহার করা হয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তার কোনোটাই পরিলক্ষিত হয় না। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল হকের মতে, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কোনো যাত্রী বিমানে অস্ত্র নিয়ে উঠে যাবেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর দুবাইগামী ফ্লাইটের ওই যাত্রী ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই উড়োজাহাজে উঠেছিলেন। তাই তার কাছে যদি অস্ত্র থেকে থাকে সেটা শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শিথিলতার কারণেই  হয়েছে। এত বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে বিমানবন্দর পরিচালনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠবে। এ ব্যাপারে এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী বলেন, বাংলাদেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু দিন ধরেই প্রশ্ন আছে। এমনকি বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করার ঘটনাও আছে। এমন সময় চট্টগ্রামের ঘটনা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরেক দফা ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো রকমের ঝুঁকি না নিয়ে একেবারে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।

কে এই ছিনতাইকারী : চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। ২৬-২৭ বছর বয়সী এই ছিনতাইকারী তার নাম বলেছেন ‘মাহাদী’। তার চেহারা সাধারণ বাংলাদেশিদের থেকে খানিকটা আলাদা। এ কারণে পাইলট প্রথমে তাকে বিদেশি বলেই ধারণা করেছিলেন। পরে তার কথাবার্তায় তিনি যে বাংলাদেশি সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তার নাম প্রকৃতই মাহাদী কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। টিকিটে তার নাম ছিল মাজিদুল ইসলাম। বিমানের টিকিট লগের সূত্র ধরে তার নাম খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কী তার উদ্দেশ্য ছিল, তাও জানার চেষ্টা হয়েছে। অভিযান শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান জানান, পাইলটের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি একবার নিজের নাম মাহাদী বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাথমিকভাবে ছিনতাইকারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার ফোন নম্বর দিতে পারেননি। অভিযানে থাকা সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারাও তার আর কোনো পরিচয় দিতে পারেননি। বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল নাঈম হাসান বলেছেন, ছিনতাইকারীকে খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। সাধারণত ছিনতাইয়ের ঘটনায় যেমনটা দেখা যায়, তেমনভাবে তিনি যাত্রী বা ক্রুদের জিম্মি করার চেষ্টা করেননি। ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের ধারণা, বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং প্লেন ময়ূরপঙ্খী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটে মাহাদী ছিলেন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের যাত্রী। কারণ শাহজালাল বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের যথেষ্ট গুরুত্ব নিয়ে নিখুঁতভাবে তল্লাশি করা হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে তল্লাশির কাজটির তুলনামূলক ঢিলেঢালাভাবে চলে। জানা গেছে, ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা ‘মাহাদী’কে আহত অবস্থায় এয়ারক্রাফট থেকে বের করা হয়। পরে তিনি মারা যান। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। অবশ্য এই পিস্তল আসল কিনা সে বিষয়ে গতকাল রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

 

সর্বশেষ খবর