শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছিনতাই নাটকের শেষ দৃশ্য

মির্জা মেহেদী তমাল

জীবন বাজি রেখেছিলেন তিনি। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে বিমান ছিনতাইকারী পলাশকে নানা কথায় ভুলিয়ে ভালিয়ে রেখেছিলেন। শেষে তাকেই জিম্মি করে রেখেছিল মারমুখী পলাশ। আর সেই ব্যক্তিটি হলেন বিমানের কেবিন ক্রু শহীদুজ্জামান সাগর। সেনা কমান্ডোদের চোখকে ফাঁকি দিতে পলাশ কেবিন ক্রু সাগরের পোশাক খুলে নিজেই পরে নিয়েছিলেন। কিন্তু সাগর কৌশলে উড়োজাহাজ থেকে দৌড়ে বেরিয়ে না এলে হয়তো তার ভয়ঙ্কর কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। উড়োজাহাজের যাত্রী ও তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, ছিনতাই নাটকের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাগরের জীবন ছিল আশঙ্কার মধ্যে। সূত্র জানায়, প্রথমেই ছিনতাইকারী পলাশ অস্ত্রের ভয় দেখিয়েছিল কেবিন ক্রুদের। কেবিন ক্রু বিষয়টি কৌশলে পাইলটকে জানান। পাইলট তখন চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ করে। আকাশে উড়ে চলা উড়োজাহাজের মধ্যে পালাশকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখতে নানা ধরনের গল্প করতে থাকেন। কিন্তু মারমুখী পলাশকে সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছিল কেবিন ক্রু সাগরসহ অন্যদের। বিমানের একজন যাত্রী বলেন, ছিনতাইকারীর হাতে অস্ত্র ছিল। একটা শব্দও তিনি পেয়েছেন। ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা যায় বিমানের ভিতর। এতে আতঙ্ক দেখা দেয় সবার মধ্যে।

এ সময় সাগর যেন ত্রাণকর্তার মতো কাজ করতে শুরু করেন। যাত্রীদের জীবন রক্ষায় নিজের জীবন বাজি রেখে ছিনতাইকারীকে ব্যতিব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন। তাকে চা-কফি খাইয়ে, সমস্যার সমাধান করার অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করেন। বিমান ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের রানওয়েতে। তখন যাত্রী সাধারণ জরুরি পথে নামতে শুরু করে। পাইলটও নেমে যান। শুধু ভিতরে আটকে থাকেন সেই সাগর। তাকে জিম্মি করে ফেলে পলাশ। জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি তখন তিনি। কেউ নেই উড়োজাহাজে। শুধু ছিনতাইকারী পলাশ এবং সাগর। সাগরের খোঁজ নিতে ভিতরে আবারও ঢুকেছিলেন আরেক কেবিন ক্রু সাকুর। কিন্তু সাগর তাকে চলে যেতে বলেন। উড়োজাহাজ তখন ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাগরের ফোনেই বাইরে থেকে সব যোগাযোগ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছিনতাইকারী পলাশ এ সময় বুঝতে পারেন ভিতরে অভিযান হয়তো হবে। তখন তিনি বাঁচতে শেষ চেষ্টা করেন। আর তার চেষ্টার ঘুঁটি হিসেবে রাখেন সাগরকে। তিনি সাগরের পোশাক খুলে দিতে বলে। সাগর তখন তাই করে। পলাশ কেবিন ক্রুর পোশাক পরে নিজেকে সোনা কমান্ডোর টার্গেট থেকে আড়াল করতে চেয়েছিল। এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল সাগর নিজেও। তিনি হয়তো টার্গেটে পড়ে যাবেন। সাগর তার পোশাক খুলে পলাশের হাতে তুলে দেন। পলাশ সেই পোশাক নিয়ে যখন পরতে শুরু করেন, ওই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দৌড়ে উড়োজাহাজ থেকে বেরিয়ে যান সাগর। নতুন জীবন ফিরে পান সাগর। তার বুদ্ধিমত্তায় যেমন উড়োজাহাজ রক্ষা পায় তেমনি জীবন বাঁচে ১৪৭ জন যাত্রীর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর