শিরোনাম
রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাখো জনতার সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা

শামীম আহমেদ

লাখো জনতার সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা

একাত্তরের এদিন ঢাকায় পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ছাত্র জনসভায় আকস্মিক উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পল্টন ময়দান তখন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। লাখো জনতার ‘জয়বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাতাস। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এ সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পার্লামেন্টারি পার্টির নেতাদের ৩ মার্চ এক গোলটেবিল বৈঠকে বসার আহ্বান জানান। এতে আওয়ামী লীগ, পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ, ন্যাপ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ও পিডিপির নেতাদের আসতে বলা হয়। বঙ্গবন্ধু এ বৈঠককে ‘নিষ্ঠুর তামাশা’ বলে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ওইদিন বিকালে ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে পল্টন ময়দানে হলো এক বিশাল ছাত্র-জনসভা। এ সভায় ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খানসহ অনেকেই বক্তৃতা করেন। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে শাজাহান সিরাজ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পড়ি। ইশতেহার পড়েছি দুবার। একবার পড়ি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে। দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর সামনে। এ ইশতেহার পাঠ করাটা দেশের ইতিহাসে আর আমার জীবনে সবচেয়ে বড় একটি ঘটনা। সভায় বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করার কথা আমার। পল্টন ময়দান লাখ লাখ মানুষে ভরে গেছে। যখন ইশতেহার পড়া শুরু করি তখন ছিল চরম এক উত্তেজনা। মানুষ বার বার বলছিল, ‘পড়ুন। এখনই ইশতেহার পড়া শুরু করুন’। অনেকটা বাধ্য হয়েই পড়তে শুরু করলাম। ইশতেহার পড়ার শেষ মুহূর্তে মঞ্চে এলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, ইশতেহার পড়া শেষ করে বঙ্গবন্ধুর সামনে আবার পড়া শুরু করলাম। লাইনের পর লাইন পড়ে গেলাম। ইশতেহারের ঘোষণায় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ৭ কোটি মানুষের আবাসভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’ বলে উল্লেখ করি। একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করি। বঙ্গবন্ধু সবসময় গুনগুন করে গাইতেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। তাই আমরা এই গানটি বেশি পছন্দ করতাম। ইশতেহারে জাতীয় পতাকা কেমন হবে তার উল্লেখ ছিল। ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘বঙ্গবন্ধু হবেন স্বাধীন বাংলার মহান নেতা’। তুমুল করতালির মধ্যে প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পল্টন ও পাশের এলাকা। সভায় বঙ্গবন্ধু অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার ডাক দেন। তিনি অবিলম্বে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণের জন্য সামরিক সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর