সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাপ সহাবস্থান নিয়ে আবারও প্রশ্ন

ডাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকজন প্রার্থীকে জোরপূর্বক প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। গত শনিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলে স্বতন্ত্র ও কোটা আন্দোলনকারীদের প্যানেলের কয়েকজন প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চাপ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগী কয়েকজন প্রার্থী চাপের মুখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেও নিয়েছেন। তাই ডাকসু নির্বাচনকে  কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হওয়া ‘ইতিবাচক’ পরিবেশ আবারও বিঘিœত হচ্ছে বলে মনে করছে ছাত্রসংগঠনগুলো। এসব ঘটনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ছাত্রনেতারা। তবে ক্যাম্পাসে নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে দাবি করছে ছাত্রলীগ। জানা যায়, গত শনিবার ছিল ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে তার কক্ষে (৩০২ নং) হল সংসদে প্রার্থী হওয়া কয়েকজনকে ডেকে পাঠান। পরদিন দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বলেন তিনি। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ও হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেলের ভিপি ও জিএস প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। ওই রাতে সেখানে উপস্থিত স্বতন্ত্র পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে দুজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে বামপন্থি জোটের জিএস পদপ্রার্থী শাহাব উদ্দীন নামে এক প্রার্থীকে ওই হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায়। পরে ওই প্রার্থী হল প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলে তার প্রার্থিতা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের অপর এক স্বতন্ত্র সংস্কৃতি সম্পাদক পদে প্রার্থীকেও জোর করে প্রত্যাহার করার অভিযোগ ওঠে। মাহবুবুল আলম সাজিদ নামের ওই প্রার্থী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তাকে জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার বর্ণনা দিয়ে পোস্টও দিয়েছেন। এতে তিনি শাখার ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর কথা উল্লেখ করে তারা তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ সময় তাকে মারধর ও শিবির অপবাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পরে এস এম হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারের হস্তক্ষেপে তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা প্রতিযোগিতা করবে, তারাই ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন, আমরা তাদের চিন্তা-ভাবনা করতে বলেছি। এর বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের কাউকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলিনি। কোটা আন্দোলনের কাউকে বলেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানামতে আমি এ রকম কিছু করিনি। যারা ছাত্রলীগ করে শুধু তাদেরই বলেছি।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের এমন পরিস্থিতিতে সহাবস্থান নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রদল, বামপন্থি জোট ও কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে’র নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে ডাকসুতে বামজোটের ভিপি পদপ্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, বিভিন্ন হলে প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা ভিসি স্যার এবং রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করছি। তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ রকম অবস্থার মধ্য দিয়ে ডাকসুকে কলুষিত করার যে চক্রান্ত চলছে, আমরা আশা করেছিলাম তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা আমাদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয়ের সৃষ্টি করছে। সহাবস্থান নিয়ে আগের যে শঙ্কা তা এখনো কাটেনি। ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে ছাত্রদলের জি এস পদপ্রার্থী আনিছুর রহমান অনিক বলেন, আমরা এই পরিবেশকে ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। তবে বিভিন্ন হলে যেভাবে প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া হলো তাতে সহাবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ডাকসুতে কোটা আন্দোলনকারীদের ভিপি প্রার্থী সাধারণ ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, জোর করে বসিয়ে দেওয়ার যে ঘটনা তা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসন যদি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো তাহলে এই অবস্থার নিরসন হতো। ছাত্রসংগঠনসমূহের অভিযোগ নিয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা  এস এম মাহফুজুর রহমান জানতে চাইলে  তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি প্রক্টরের সঙ্গে কথার পরামর্শ দেন তিনি । পরে  এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম কে এম গোলাম রাব্বানী ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, লিখিতভাবে জানালেই ব্যবস্থা  নেওয়া হবে। প্রশাসন সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কাজ করছে। কারণ সবার জন্য সুযোগ সমান। ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা তো সবাই কাজ করছেন। সহাবস্থান নেই, এই অভিযোগ না করার অভ্যাস না করে ছাত্রসংগঠনগুলোকে কাজ শুরু করতে হবে। ক্যাম্পাসে সব দল-মত ও আদর্শের সংগঠনকে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় ডাকসুর ওয়েবসাইট ও হলগুলোর নোটিস বোর্ডে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ডাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে লড়বেন মোট ২২৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ২১ প্রার্থী, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৩ জন প্রার্থী।

এ ছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে  ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন এবং  সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন। পাশাপাশি ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে লড়বেন মোট ৮৬ জন প্রার্থী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে বাদ পড়েছিলেন তাদের মধ্যে যে ৫ জন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আবেদন করেছিলেন। তারা সবাই প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বামজোটের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর ও আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এম আর এম আসিফুর রহমান। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবে বলে জানিয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ডাকসুর ওয়েবসাইটসূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর