সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেমিক্যাল উচ্ছেদে ফের বাধা

পুরান ঢাকায় ১৩ বাড়ির গ্যাস পানি বিদ্যুৎ বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকায় অবৈধ রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে ফের বাধার মুখে পড়েছে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের একটি দল। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বিদ্যুতের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত টাস্কফোর্স শহীদনগরে রাজনারায়ণ রোডে, ইসলামবাগের হাফেজ্জী হুজুর রোডে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে। শহীদনগরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা টাস্কফোর্স সদস্যদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে লালবাগ থানার পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল ১৩টি হোল্ডিংয়ের গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টানা তিন দিনে মোট ৪৭টি হোল্ডিংয়ের পরিসেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত শনিবারও পুরান ঢাকার বকশীবাজারের জয়নাগ রোডে নিষিদ্ধ রাসায়নিক গুদাম, পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিলেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। তারা ব্যবসায়ীদের বাধায় পুরান ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশ্য পরে দ্বিতীয় দফায় গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের হস্তক্ষেপে অভিযান চালানো হয়। সিটি করপোরেশনের ঘোষণায় বলা হয়, ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে র পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওই এলাকার রাসায়নিকের মজুত থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে বাড়ির মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুড়িহাট্টা মোড় সংলগ্ন হাজী আজগর আলী লেনের ২৭, ২৯/২ এবং ৩১/বি নম্বর হোল্ডিংয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে টাস্কফোর্স। প্রথমে অভিযান চালানো হয় ২৯/২ নম্বর হোল্ডিংয়ের মান্নান মিয়ার ৬ তলা ভবনে। তবে মান্নান মিয়ার কর্মচারী আসাদের দাবি, এই ভবনে নিচতলায় ব্যাগের গোডাউন। কোনো কেমিক্যাল নেই। বেআইনিভাবে ওই ভবনের সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। আজগর আলী লেনে অভিযানের পর টাস্কফোর্স দল পর্যায়ক্রমে রাজনারায়ণ রোড ও শহীদনগরে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়ে। পড়ে কেল্লার মোড় আর এমডি রোডের ২/৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে পাঁচটি সংযোগ, আগাসাদেক রোডের ৯/১, ৮৫, ২৬/৯, ২৬/১০, ২৬/১১ হোল্ডিংয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে টাস্কফোর্স।

দুপুর ১২টার দিকে রাজনারায়ণ রোডে ২/৩ হোল্ডিং নম্বরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ প্লাস্টিকের চারটি টিনশেড কারখানা, একটি পাঁচতলা ভবনে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানার সন্ধান পায় টাস্কফোর্স টিম-২ দল। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে ঢাকা জেলা পরিষদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা শিরীন ও সিটি করপোরেশন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হাসানসহ টাস্কফোর্স-২ এর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে।

পরে জাহিদ হাসান সাংবাদিকদের জানান, অবরুদ্ধের বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে লালবাগ থানা পুলিশকে জানানো হয়েছিল। তাদের সহায়তায় বেলা সোয়া ২টার দিকে তারা মুক্ত হন। পরে ওইসব কারখানার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা শিরীন বলেন, যত বাধাই আসুক অভিযান চলবে।

আভিযানিক দল আসার আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকরা চুড়িহাট্টা মোড় থেকে অভিযানের বিরুদ্ধে একটি মিছিল বের করে। প্রায় দেড় হাজার মানুষের একটি মিছিল ওয়াটার ওয়ার্ক লেন হয়ে লালবাগ, ইসলামবাগ, চকবাজাার এবং শহীদনগর প্রদক্ষিণ করে। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত লালবাগ চৌরাস্তা অবরোধ করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। এতে আশপাশের সব রাস্তার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং রোল প্রস্তুতকারক মালিক ও বণিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন। বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু তালেব বলেন, এলাকার সব বাসায় কেমিক্যালের গুদাম নেই। বাসার নিচে গুদাম থাকলেই সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টাস্কফোর্সের শুধু নিষিদ্ধ রাসায়নিক গুদামের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার কথা। কিন্তু তারা রাসায়নিকের পাশাপাশি পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারখানা ও গুদাম উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কোনো কথাই শুনছে না। তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি, এমনকি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়নি। তাই উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত ২৯টি বিস্ফোরক আইটেমের বাইরে অন্য কোনো আইটেমের গোডাউন কিংবা কারখানার ইউটিলিটি সার্ভিস বন্ধ করতে পারবে না।  লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজির আহমেদ খান বলেন, টাস্কফোর্সের সদস্যরা দুটি স্থানে বাধার মুখে পড়েছিলেন। তাদের উদ্ধার করতে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। স্থানীয়দের বুঝিয়েই আমরা তাদের উদ্ধার করেছি। প্রসঙ্গত, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট ৭১ জন মারা গেছেন। প্রাথমিক তদন্তে আগুনের কারণ হিসেবে রাসায়নিক পদার্থকেই দায়ী করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকেই পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনগুলো থেকে রাসায়নিক সরানোর নির্দেশ দিয়েছে সিটি করপোরেশন।

সর্বশেষ খবর