বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
অরুন্ধতী রায়ের বক্তৃতা

গণতন্ত্র মানে অধিকারের কথা বলা

রাশেদুর রহমান

গণতন্ত্র মানে অধিকারের কথা বলা

ভারতের পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেছেন, গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়, গণতন্ত্র মানে হলো, মৌলিক অধিকারসহ অন্যান্য অধিকারের কথা বলা। কিন্তু গণতন্ত্রের সংগঠনগুলো এখন অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছে। এটা কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো উপমহাদেশের অবস্থা। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য প্রয়োজন সাংগঠনিক পুনর্গঠন। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় এক স্মারক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অবশ্য এর আগে তার এ বক্তৃতা নিয়ে দিনব্যাপী নানা ঘটনাপ্রবাহ চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলায় অংশ নিতে আসা বুকার পুরস্কারজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায় শেষ পর্যন্ত ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে অরুন্ধতী রায় গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, বাংলাদেশ, ভারত, উপমহাদেশীয় রাজনীতি এবং তার লেখকজীবন নিয়ে নানা কথা বলেন। বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও আয়োজক ছবিমেলার শীর্ষ সংগঠক শহিদুল আলমের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে উঠে আসে এসব প্রসঙ্গ। মাঝেমধ্যে উত্তরের রেফারেন্স হিসেবে নিজের লেখা বই থেকে পড়ে শোনান অরুন্ধতী। সেখান থেকেই উত্তর খুঁজে নেন উপস্থিত কয়েক শ দর্শক-শ্রোতা। প্রাকৃতিক সম্পদ- যেমন নদী, সমুদ্র, পানি ইত্যাদিতে সবারই অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে অরুন্ধতী বলেন, ‘সমুদ্র, নদী তথা প্রাকৃতিক সম্পদে সবার অধিকার রয়েছে। পানি নিয়ে যে সমস্যা আছে তার সমাধান হওয়া উচিত। দুই দেশের মধ্যে এটা নিয়ে সমাধান হওয়া উচিত।’ সুন্দরবনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের ফলে গরিবদেরই মূল্যটা দিতে হয়। যে কোনো প্রজেক্ট হোক, তাদের ঘরছাড়া হতে হয়। জমি হারাতে হয়। আম্বানিদের মতো ধনীরাই কেবল এর সুবিধা পান।’ পুঁজিবাদের সমালোচনা করে অরুন্ধতী বলেন, ‘পুঁজিবাদী অর্থনীতি সমাজে বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিত্তবানরাই কেবল এ ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছে। কিন্তু গরিবরা গরিবই থেকে যাচ্ছে। জমি হারাচ্ছে কৃষক।’ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে শহিদুল আলমকে কারাগারে পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেবল শহিদুল আলমই নন, আরও অনেকেই জেলে যাচ্ছেন। এটা কেন?’ এভাবে আর্টিস্টদের জেলে বন্দী করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা অতীত নিয়ে লড়াই করছি। বর্তমান নিয়েও লড়াই করছি। ভবিষ্যতের জন্যও আমাদের লড়াই করতে হবে। ঘৃণ্য রাজনীতির কবল থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে।’ কাশ্মীর রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে কেবল মানবাধিকার রিপোর্টগুলো সামনে রেখে কথা বললেই হবে না, স্থানীয়রা কী চায় তাও বিবেচনায় রাখতে হবে।’ এ সময় অরুন্ধতী তার প্রথম প্রকাশিত বহুল আলোচিত বই ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ নিয়ে বলেন, ‘এ বইটা লেখার আগে আমি বেশ কয়েক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। ছোটখাটো অনেক বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি। তার পরই বইটা লেখায় হাত দিয়েছি। সত্যি বলতে আমি কখনো খুব বেশি উচ্চাকাক্সক্ষী ছিলাম না। এমন ভালো কিছু হবে তাও ভাবিনি।’ প্রথম বইটা প্রকাশিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন তিনি আর কোনো বই লেখেননি। এর কারণ হিসেবে বুকারজয়ী লেখিকা বলেন, ‘প্রথম বইটা পাবলিশ হওয়ার পর সময়টা খুব ভালো ছিল না। ভারত নিউক্লিয়ার টেস্ট করছিল। সাবকন্টিনেন্টে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিল। ওই সময়ে সত্যি কথা লেখাটা কঠিনই ছিল। তা ছাড়া আমার এক বন্ধু বলেছিল, সফল হয়েছ তো মরেছ। সে সময় ম্যাগাজিনে নিজের ছবি দেখতাম। নিজেকে খুব সফল মনে হতো। আর ওখানটাতেই ঝামেলা বেধে যায়।’ প্রথমে অরুন্ধতী রায়ের বক্তৃতা অনুষ্ঠান রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আয়োজনের অনুমতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করে নেয় পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তেজগাঁও থানা পুলিশ বক্তৃতা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি বাতিল করার কথা জানায় আয়োজক ছবিমেলা কর্তৃপক্ষকে। কী কারণে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি বাতিল করা হয় এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি পুলিশ। একপর্যায়ে গতকাল সকালে অনুষ্ঠান বাতিল বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। পরে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টার মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠান। অবশ্য সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে মাইডাস কর্তৃপক্ষও আয়োজন সম্ভব নয় বলে জানায়। পরে পুলিশ অনুমতি দিলে সেখানেই শেষ পর্যন্ত তা নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজ আনাম, নূরুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর