মহিলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে একাত্তরের এদিনে নারীরা ঢাকায় বিশাল মিছিল করেন। পেশাদার শিল্পী, লেখক, সাংবাদিক, গণশিল্পীরা সভা-সমাবেশ ও মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। অসহযোগ চলতে থাকে পুরোদমে। এদিনে অলি আহাদের নেতৃত্বে পল্টনে জনসভা এবং মোজাফফর আহমেদের সভাপতিত্বে গণসমাবেশ হয়। ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের গেট ভেঙে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যান। যশোরে প্রায় ৪ লাখ লোকের এক গণবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। এসব ঘটনায় পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বহুসংখ্যক সৈন্য ও বিহারি জনতার হাতে হতাহত হয়। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, ‘অগ্নিঝরা মার্চ ছিল একটি জাতির অধিকার আদায়ের মাস। ১৯৭১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি মার্চ মাস আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়। ’৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতি হিসেবে যে আকাক্সক্ষা ছিল তা এই মার্চ আমাদের দিয়েছে।’ কামাল লোহানী বলেন, ‘সেই সংগ্রাম চেতনা প্রত্যেক সাধারণ নাগরিক, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সরকারি চাকুরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।’ সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি সংসদ সদস্যদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সংসদের প্রথম অধিবেশন ঢাকায় অনুষ্ঠানের দাবি তুলেছিলেন। তা গৃহীত হয়েছিল। ৩ মার্চ ঢাকায় সংসদ অধিবেশন বসবে বলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষণা দিলেন। অধিবেশন আয়োজনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া ১ মার্চ আকস্মিক এক বেতার ভাষণে ঢাকার অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করেন। অগ্নিগর্ভ বাংলায় স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি হলো দ্রুতগতিতে। সমগ্র বাংলার মানুষ প্রতিরোধে উঠে দাঁড়াল সংঘবদ্ধভাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ব্যস্ত ছিলেন আসন্ন সংসদ অধিবেশন নিয়ে বিজয়ী সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায়। সাংবাদিক আর অগণিত মানুষ জড়ো হলেন বৈঠকের স্থান পূর্বাণী হোটেলে। তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণা প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানালেন বটে কিন্তু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানালেন। ওইদিন পূর্বাণী হোটেলে বঙ্গবন্ধু বৈঠক করলেন। তিনি অধিবেশন বাতিল করার প্রতিবাদ করলেন।