শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব বাড়ছে

রফিকুল ইসলাম রনি

নারী নেতৃত্ব বাড়ছে আওয়ামী লীগে। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের শর্ত মেনে রাজনৈতিক দলগুলো গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে ২০২০ সালের মধ্যে কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ পদে নারীদের অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত ১০ বছরে এ শর্ত পূরণে অন্য দলগুলো তেমন উদ্যোগী না হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ জন নারী রয়েছেন, অর্থাৎ ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে, বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ৬৪ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০০৮ সালের নিবন্ধনের পর ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৬ সালে সম্মেলন করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের ১৮ ও ১৯তম (২০০৯-২০১২) কাউন্সিলে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১১ জন নারী ছিলেন। বর্তমানে (২০১৬ সালের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ জন নারী রয়েছেন, এর মধ্যে সভানেত্রী ছাড়াও দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে তিনজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ সম্পাদকম লীতে ৬, সদস্য পদে ৫ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে আওয়ামী লীগের ২০ জন নারী বিজয়ী হয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদে বিজয়ী হয়েছিলেন ১৮ জন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সংসদে ক্রমান্বয়ে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।   

সূত্র মতে, ৬৪ জেলা ও ১২টি মহানগর নিয়ে মোট ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে আওয়ামী লীগের। এর বাইরে ৪৯০টি উপজেলা কমিটি, ৩২৩টি পৌরসভা ও ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন কমিটি এবং প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। গত জুন পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে নারী সদস্যের হার ১৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে দলটি। নারীদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে ইসির কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছিল, দলের তিন সহযোগী সংগঠন- বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিকলীগের শতভাগ সদস্য নারী। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে সংগঠনগুলো কাজ করছে। ২০২০ সালের মধ্যেই সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে যথেষ্ট আন্তরিক। আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই নারীরা উচ্চ আদালতের বিচারপতি, পাইলট, সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। আবার রাজনীতিতেও নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। ২০২০ সালের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সর্বস্তরে নারী নেতৃত্ব বাড়ানো হবে।’ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদে দলের জন্য সংরক্ষিত নারী আসনে মাত্র দুজন পুরনো, বাকি নতুনদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলে নতুন নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি, তৃণমূল থেকে যোগ্যদের কেন্দ্রে আনা, নতুনদের জায়গা করে দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে যোগ্যতা ও দলের জন্য ত্যাগ বিবেচনায় আগামী জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীরাও জায়গা পাবেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। 

আওয়ামী লীগ নীতি নির্ধারকরা বলছেন, নারীর ক্ষমতায়নে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম নারীনীতি প্রণয়ন করেন। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশ নেওয়া নিশ্চিত করার বহুমুখী পদক্ষেপও নেয় তার সরকার। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটানা ১০ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে নারীর অবস্থান মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। দলে নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে দলপ্রধান শেখ হাসিনার সদিচ্ছা রয়েছে। আর ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নারী তাদের নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে নারী নেতৃত্বের পরিধি আরও বেড়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর