শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্যানেল নয় প্রার্থী দেখে ভোট দেবে শিক্ষার্থীরা

আকতারুজ্জামান

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। বিভিন্ন প্রার্থী নানা প্যানেল-পরিষদ  নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কেউবা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তবে ভোটাররা বলছেন, প্যানেল বা পরিষদ নয় বরং প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, ব্যক্তিত্ব, কাজ করার মানসিকতা দেখেই তারা ভোট দেবেন। ছাত্রনেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা প্যানেলকে গুরুত্ব দেবেন না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই মিলেছে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম সারওয়ার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা, শিক্ষার্থীদের অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত। কোনো প্যানেল নয় বরং যাকে মনে হবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বুঝবেন, তাকেই ভোট দেব। এ ক্ষেত্রে দল-মত বড় নয়, প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকেই প্রাধান্য দেব। শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম আঁখি বলেন, আবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রায় সব প্রার্থীই কমবেশি পরিচিত মুখ। কারা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন, সেটিও আমাদের জানা। তাই প্যানেল দেখে নয়, তাদের ইমেজ দেখেই ভোট দেব আমরা। কারণ, তারাই ভবিষ্যতে আমাদের পক্ষে কথা বলবেন। নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল করলে চলবে না। কোনো কোনো প্রার্থীও বলছেন, কোন প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিল প্রার্থী তা বিবেচনায় নেবেন না ভোটাররা। স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় দেখেছি ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সমস্যা সমাধানে কাউকে পাশে পান না। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোও তেমন কোনো ভূমিকা পালন করেন না। অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রভুর ভূমিকায় থাকতে চান। ক্যাম্পাসে দখলদারিত্ব, রাজত্ব কায়েম করতে চান। তাই কোনো প্যানেল নয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। অতীতেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাশে ছিলাম, ডাকসু সাধারণ সম্পাদক হয়েও পাশে থাকতে চাই। আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা আমার পক্ষে মত দেবে।

নির্বাচন উপলক্ষে কথার ফুলঝুরি আর নানা প্রতিশ্রুতি পূরণের ইশতেহার নিয়ে প্রার্থীরা ভোটারের কাছে গেলেও প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করার মানসিকতা দেখেই ভোট দেবেন বলে জানান ভোটাররা। আইন বিভাগে অধ্যয়নরত ও সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী তাসনিব মৌলি বলেন, প্রার্থীদের ইশতেহার বড় বিষয় নয়। কোন প্যানেল থেকে নির্বাচন করছে সেটিও বিবেচ্য নয়। আমরা প্রার্থী দেখে, তার কাজ করার মানসিকতা দেখেই ভোট দেব। ডাকসু নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে যারা কাজ করেন তাদেরই ভোট দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত কায়ছার আহমেদ বলেন, আমাদের ভোটের মাধ্যমে একজন প্রকৃত শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্রনেতা নির্বাচিত হবেন। যারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবির আন্দোলনের বিরোধিতা করে, যারা শিক্ষার্থীদের কোণঠাসা করতে চায় তাদের ভোট দেবে না এই তরুণ-তরুণী ভোটাররা। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ফারিয়া হোসেন বলেন, ডাকসু নির্বাচিত নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো ছাত্রসমাজকেই দিকনির্দেশনা দেবেন। যাদের ওপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে, তাদেরই ভোট দেব আমরা। এ ক্ষেত্রে প্যানেল গুরুত্বপূর্ণ নয়। দীর্ঘ ২৮ বছর পর এ নির্বাচনের আয়োজন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আগ্রহভরে অপেক্ষা করছেন ডাকসুর ভোট দিতে। কিন্তু ভোটগ্রহণের সময়সীমা যেন সব উত্তেজনার মধ্যে পানি ঢেলে দিচ্ছে। ভোটাররা ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, একজন ভোটারের সব পদে ভোট দিতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ মিনিট সময় লাগবে। কিন্তু মাত্র ছয় ঘণ্টা ভোট নেওয়া হলে কোনোভাবেই প্রায় ৪৩ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। অনেক শিক্ষার্থীই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণের দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর