শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বে-টার্মিনালে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বে-টার্মিনালে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি

দেশের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কর্মকান্ডে। বিশেষ করে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ওপর এই চাপ পড়ছে সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের গড় প্রবৃদ্ধি এখন ১৬ শতাংশ। এই বন্দরে গত অর্থবছরের ২৮ লাখ ৮ হাজার ৫৫৪ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনার)। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হলে ২০২২ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরকে বর্তমানের চেয়ে সাড়ে ১০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এই সক্ষমতা অর্জনে হালিশহর থেকে দক্ষিণ কাট্টলির সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘বে-টার্মিনাল’। মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের পরিপূরক হিসেবে এবং বর্তমান বন্দরের চাপ কমাতে বে-টার্মিনাল নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বন্দরের অপারেশনাল কাজের জন্য যে পরিমাণ জায়গা রয়েছে তার চেয়ে ছয়গুণ বেশি জায়গায় উত্তর হালিশহরে বঙ্গোপসাগরের তীরেই তৈরি হতে যাচ্ছে আধুনিক ও যুগোপযোগী এই বে-টার্মিনাল। এই টার্মিনালের মাধ্যমেই এক বছরে পণ্য হ্যান্ডলিং করা যাবে কমপক্ষে ৩ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার। যাতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২৩ সালের মধ্যে এই টার্মিনাল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে উঠবে এ অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক ব্যস্ত সমুদ্রবন্দর। আর এতেই পাল্টে যাবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগসহ দেশের অর্থনীতি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বে-টার্মিনালের মোট ৮৮৮ একর জমির মধ্যে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন পর্যায়ক্রমে জমির মালিকদের টাকা হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৭ একর জমি পাওয়া গেলে ডেলিভারি কনটেইনার ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণ কাজ আগামী এক বছরের মধ্যেই শেষ করতে পারব বলে আশা করি। ফলে বন্দরের শৃঙ্খলা-গতিশীলতা যেমন বাড়বে তেমনি বিমানবন্দর সড়কের যানজটও কমে যাবে। বাকি ৮২১ একর সরকারি খাসজমি পেতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। বন্দর চেয়ারম্যান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পরপরই বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে এখানে কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে মাটি ভরাটের মাধ্যমে দৃশ্যত এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের চেহারাই পাল্টে যাবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানের মূল বন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে নির্মিতব্য আধুনিক ‘বে-টার্মিনাল’ চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলির রাশমণি ঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। তিন পর্বে নির্মাণকাজে ২০২১ সালের আগেই এ প্রকল্পের প্রথম পর্বের কাজ সম্পন্ন করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন করে অপারেশনে আনা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে আসা জাহাজে যেখানে সর্বোচ্চ ১৮০০ কনটেইনার বহন করে সেখানে বে-টার্মিনালে ৫ হাজার কনটেইনারবাহী বিশাল জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। সমীক্ষা অনুযায়ী, হালিশহর উপকূল তীর থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরে জেগে ওঠা চরের সঙ্গে যে চ্যানেলটি রয়েছে, তার গভীরতা ১০ মিটারের মতো। সাগরের দিকে এর গভীরতা ১২ মিটারেরও বেশি। অর্থাৎ এই টার্মিনাল দিয়ে ১২ মিটার গভীরতার এবং ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান জেটিগুলোতে ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় কোনো জাহাজ ভিড়তে পারে না। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বে-টার্মিনাল হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইউনিট-২। বে-টার্মিনাল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, দেশের আমদানি-রপ্তানি গতিশীলতা বেড়ে যাবে। এদিকে বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, বে-টার্মিনাল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বে-টার্মিনালে বড় বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে ফিডার জাহাজের প্রয়োজন কমে আসবে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের প্রয়োজনীয় একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে এই প্রকল্পের আওতাধীন। এতে অন্তত ৫ হাজার ভার যানবাহন রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে নগরকেন্দ্রিক যানজট কমে যাবে।

সর্বশেষ খবর