শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিঙ্গেল ডিজিট সুদ নিয়ে বিশৃঙ্খলা

মানিক মুনতাসির

আমানত ও ঋণের সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হার নিয়ে ব্যাংক খাতে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত একটি ব্যাংকও সিঙ্গেল ডিজিট সুদে শিল্পঋণ দেয়নি। যদিও দাবি করা হচ্ছে, ৯টি ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে শিল্পঋণ বিতরণ করছে। বাস্তবে এসব ব্যাংকও ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ আদায় করছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলো তাদের ওয়েবসাইটে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট প্রদর্শন করলেও বাস্তবে সে অনুযায়ী ঋণ দিচ্ছে না। এছাড়া নিজেদের ডিপোজিট বাড়াতে এবং রিপোর্ট ভালো দেখাতে আমানতের সুদ হারের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেট ৬ শতাংশ মানছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে কয়েকটি ব্যাংক। জানা গেছে, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর সময় প্রকৃত তথ্য গোপণ করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ তুলেছেন খোদ সাবেক ও বতর্মান মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা। এ নিয়ে সংসদেও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে মাত্র কদিন আগে। আর ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সাবেক ও বর্তমান একাধিক মন্ত্রী ও এমপি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শিল্পপতিরাও অর্থমন্ত্রীর কাছে বিস্তর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হারের আড়ালে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের শুভঙ্করের ফাঁকি দিচ্ছে।  এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার ও উচ্চ হারের খেলাপি ঋণ এই দুটি বিষয়ই আমাদের অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ব্যাংক ঋণের সুদ একটি গ্রহণযোগ্য ও ব্যবসাবান্ধব পর্যায়ে নিয়ে আসতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। সে জন্য কার্যকর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।  জানা গেছে, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেই কমে যাচ্ছে আমানত। বিপরীতে বাড়ছে ঋণ চাহিদা। এজন্য ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে। স্বল্পমেয়াদে আমানত রাখে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব আমানতে এতদিন ১০ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়া হতো। কিন্তু সুদ নামিয়ে ৬ শতাংশে আনায় অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যাংক থেকে আমানত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর আমানত কমে যাচ্ছে। এতে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঘোষিত সুদের বেশি হারের সুদের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ নজরদারি করা হচ্ছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। যেসব ব্যাংকের এমডি এখনই ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে অনীহা প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায় থেকে কথা বলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককেও অবহিত করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক মালিকদের সংগঠন (বিএবির) পক্ষ থেকেও ব্যাংকের এমডিদের ওপর ঋণের সুদ কমাতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারছে না কেউই।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিত চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থেই। আর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর