মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভিসি আখতারুজ্জামান বললেন

আমি খুব আনন্দ অনুভব করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমি খুব আনন্দ অনুভব করছি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান। উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করি। যতগুলো ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করলাম, অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। আমি খুব আনন্দ অনুভব করছি।’ সকালে কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব ব্যালটে ছাত্রলীগের হল সংসদের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়া ছিল। এরপর এই হলের ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘কালক্ষেপণ না করে প্রভোস্টকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি খতিয়ে দেখবে কে বা কারা জড়িত।’ জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

আট শিক্ষকের পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা : ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষক এক লিখিত বিবৃতিতে তাদের পর্যবেক্ষণ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। পর্যবেক্ষক শিক্ষকরা হলেন; অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, অধ্যাপক কামরুল হাসান, অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপিকা তাহমিনা খানম এবং সহযোগী অধ্যাপক অতনু রব্বানী।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা কুয়েত-মৈত্রী হল থেকে আমাদের পর্যবেক্ষণ শুরু করি, কারণ; আমরা শুরুতেই জানতে পারি এই হলে ভোটদানে অনিয়মের কথা। আমরা জানতে পারি, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগে ছাত্রীরা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকাদের কাছে শূন্য ব্যালট বাক্স দেখতে চান। কিন্তু তাদের এই ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করা হয়। এতে ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং এক পর্যায়ে  কেন্দ্রের পাশের কক্ষ থেকে একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের পক্ষে পূরণ করা প্রচুর ব্যালট পেপার উদ্ধার করে। সেগুলোর বেশ কিছু আমরা শিক্ষকরাও দেখতে পেয়েছি। এ রকম অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। এই ঘটনায় প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ না হলেও আমরা রিটার্নিং অফিসারদের লজ্জিত ও মর্মাহত দেখতে পাই।

এক পর্যায়ে রোকেয়া হলে গোলযোগের খবর পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, সকালের কুয়েত-মৈত্রী হলের অভিজ্ঞতার পর, সরকারি ছাত্রসংগঠনের বাইরের নানান প্যানেলের শিক্ষার্থীরা ভোটকেন্দ্রের পাশের রুমে ব্যালট পেপারের সন্ধান পান এবং সেগুলোকে দেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেন। কিন্তু সেগুলো ছিল সাদা ব্যালট পেপার। এরপর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়। বিরোধী পক্ষের কয়েকজন আহত হন। উভয় পক্ষের উত্তেজনায় এরকম অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে রোকেয়া হলে, যার নিন্দা জানাই আমরা।

ছাত্রদের হলের ভিতরে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। তবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে কতগুলো অনিয়ম চোখে পড়ে। যেমন, ভোটারের আইডি চেক করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সদস্যরাই বেশিমাত্রায় ভূমিকা রেখেছেন এবং অনাবাসিক ছাত্রদের ভোট দিতে বাধাপ্রদান ও নিরুৎসাহিত করেন। ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্বিঘেœ চলাফেরা করলেও, অন্য প্যানেলের প্রার্থী ও কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে বা ভোটারের সারির আশপাশে অবস্থান করতে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। ভোটারদের লাইনে রেখে ছাত্রলীগের কর্মীরা যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্লথ করে। একটি বড় অসঙ্গতি মনে হয়েছে, ব্যালট পেপারে কোনো সিরিয়াল নম্বর ছিল না। ৪৩ হাজার ভোটারের একটি নির্বাচনের ব্যালটপেপারে সিরিয়াল নম্বর না থাকাটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ এতে নির্বাচনের ফলাফলে গুরুতর অনিয়ম ঘটানো অনেক সহজ হয়ে যায়। কোন হলে কোন সিরিয়াল গেল, তাও ট্র্যাক রাখার উপায় থাকার কথা না।

পরিশেষে আমরা এটাই বলতে চাই এই বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনাগুলো আমাদের খুবই লজ্জিত করেছে। এই ঘটনা জনগণের করে পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে বিনষ্ট করেছে। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে যা সার্বিকভাবে একাডেমিক পরিবেশ বিঘিœত করবে। এত বছর পরে অনুষ্ঠিত এই ডাকসু নির্বাচন সফলভাবে না করতে পারার ব্যর্থতার দায়ভার প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষক সবার এবং এই ব্যর্থতা সমগ্র শিক্ষক সম্প্রদায়ের নৈতিকতার মানদ কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা চাই এই ব্যর্থতার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক। সেই সঙ্গে এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর