বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপিতে হচ্ছেটা কী?

শাস্তির খড়গ শুধুই তৃণমূলে

মাহমুদ আজহার

বিএনপিতে হচ্ছেটা কী?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত প্রায় ১২১ জন তৃণমূলের নেতাকে দলের পদ এমনকি প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করে বিএনপি। তাদের সবাই মাঠ পর্যায়ের পদধারী নেতা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা ভোটে অংশ নেওয়া। এর মধ্যে সর্বশেষ গতকাল ১৬ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তৃণমূলের এসব নেতাই ছিলেন সর্বাগ্রে। আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকার নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকলেও তাদের বহিষ্কার করা হয় না। বরং এক নেতাকে একাধিক পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে হতাশ মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের প্রশ্ন-বিএনপিতে হচ্ছেটা কী? উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় কোনো স্পষ্ট অবস্থান না নিয়ে শুধু তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার কোনো সমাধান হতে পারে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব নেতা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বহিষ্কার করছে না বিএনপি। তারা বিজয়ী হলে কিংবা পরবর্তীতে আবেদন করে দলীয় স্বপদের জন্য আবেদন করে ক্ষমা চাইলে তাদের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে। আর যারা স্বপদে থেকেই ভোটে অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের সিদ্ধান্ত ছিল, এই সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই বার্তা তৃণমূলেও পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূলের কিছু নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাই দলের নীতিনির্ধারকরা তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় নেতারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো কিছু করলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অতীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলের ছড়াছড়ি থাকলেও তাদের কোনো খেসারত দিতে হয়নি। এমনকি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে তৃণমূল নেতারা কর্মীদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু রাজধানীতে থাকা ঢাকার নেতাদের ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়। এরপর থেকে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলের কোনো কমতি ছিল না। পদ নিয়ে লাপাত্তা, দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেকের অবস্থান, কর্মসূচি ঘোষণার পর একপক্ষ তা সফল না করতে অপতৎপরতাসহ নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিএনপির মধ্যসারির এক নেতা বলেন, ‘এসব বহিষ্কার একটি খেলা। এই সুযোগে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়বে। বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ার কথা বলে তারা সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেবেন। অতীতেও তাই হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ইউপি, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনেও অন্তত দুই শতাধিক মাঠের নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ৯০ ভাগের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু আর্থিকসহ নানাভাবে খেসারত দিতে হয় সংশ্লিষ্ট নেতাকে।’ জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। প্রথম দফায় বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপজেলা ভোটে প্রার্থী হন। দল থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি না পাওয়ায় তাদের অনেকেই তফসিলের পর ভোটে থাকে। পরে হঠাৎই বহিষ্কারের চিঠি চলে আসে কারও কারও বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও। মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, উপজেলা নিয়ে বিএনপির কেন্দ্র থেকে স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত না করেই বহিষ্কার করতে শুরু করে। বহিষ্কার কোনো সমাধান হতে পারে না।

নড়াইল সদর উপজেলা থেকে নির্বাচন করছেন নড়াইল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বাবু অশোক কুমার কু ু। গতকাল তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে আমি শুরুতে শুনেছিলাম, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা যাবে না। তাই আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি। আমাদের আগে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।’

আরও ১৬ জনকে বহিষ্কার : দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় নড়াইল, রংপুর, চাঁদপুর,  মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আরও ১৬ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। গতকাল দলীয় প্যাডে সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মাঠ পর্যায়ে ১২১ জন নেতা বহিষ্কার হয়েছেন।

গতকাল যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেন- নড়াইল বিএনপির সহ-সভাপতি বাবু অশোক কুমার কু ু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহা  বেগম, লোহাগড়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. ফরহাদ হোসেন অনু, চাঁদপুরের মহিলা দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রেবেকা সুলতানা,  মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদস্য আজিবুন খানম, বড়লেখা উপজেলা মহিলা দলের সদস্য আমেনা বেগম ডলি, বড়লেখা উপজেলার প্রচার সম্পাদক মো. আবদুস কুদ্দুস স্বপন, কিশোরগঞ্জের দলের সদস্য কামরুন্নাহার লুনা, মহিলা দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসমা বেগম, তাড়াইল উপজেলার সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, নিকলী উপজেলার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রেখা আখতার, ভৈরব উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহ-সভাপতি বাবর আলী বিশ্বাস,  ভোলাহাট উপজেলা মহিলা দলের সদস্য মোছা.  রেশমাতুল আরজ রেখা ও  মোছা. শাহনাজ খাতুন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিধায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর