শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোথায় হবে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র

মেলেনি উত্তর দুই বছরেও

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরুর সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, দক্ষিণাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান খুঁজে বের করার জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে দুই বছর। ২০১৭ সালে গৃহীত প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আর তিন মাস পর। এখনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জায়গাই মেলেনি। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি কোথায় হবে মেলেনি সেই প্রশ্নের উত্তরও। তবে থেমে নেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তারা দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা ঘুরে দেখেছেন। সভা করেছেন। সভায় পর্যালোচনা হয়েছে অগ্রগতি নিয়ে। সেখানে জানানো হয়েছে : ‘প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। কিন্তু প্রকল্পটির আওতায় স্থান নির্বাচনের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি।’ এ অবস্থায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় সভায়। শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে : মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশোধিত প্রকল্পের বিভিন্ন খাত ও উপখাত পর্যালোচনা করে ব্যয় বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর প্রাথমিকভাবে যেসব জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে ওইসব জায়গায় বিস্তারিত সমীক্ষা করা হবে। ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভাটি  সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন ওই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন। সচিব দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইতি রাণী পোদ্দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পটি কোথায় হবে আমরা এখনো জানি না। বেশ কয়েকটি জেলায় পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয়েছে। কিন্তু এখনো জায়গা চূড়ান্ত করা যায়নি। এটা কবে পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। ইতি রাণী পোদ্দার আরও বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আগে একটি জেলার অন্তত ১০০ বছরের ভূমির ইতিহাস জানতে হয়। সেই জায়গায় ভূমিকম্প হয়েছে কি না, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হেনেছে কি না, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। প্রকল্পটির স্পর্শকাতরতার কারণেই জায়গা খুঁজে পেতে সময় বেশি লাগছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে অন্তত ২০০ একর জমি দরকার। উল্লিখিত জমির প্রাপ্যতা এবং জমির মালিকানা ও ভূমির ব্যবহার সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য চেয়ে গত বছরের মার্চে দক্ষিণাঞ্চলের ১৫টি জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জেলার জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে জবাব পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভোলা, ফেনী, মাদারীপুর, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা জেলা জানিয়ে দেয় তাদের কাছে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার কাছ থেকে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার সম্ভাব্য কয়েকটি জায়গার নাম পাঠায়। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে বরিশালের হিজলার চর মেঘা, বরগুনার কুমিরমারা, তালতলীর নিশানবাড়ি, পাথরঘাটার লালদিয়ার চর, পটুয়াখালীর চর মোনাজাত, সোনারচর, মৌডুবি, নোয়াখালীর হাতিয়ার মৌলভীর চর ও চর ঘাষিয়া, পিরোজপুরের খোলপটুয়া, মাদারীপুরের চর জানাজাত, চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপের উড়িরচর, বাঁশখালীর খুদুকখালি ও ছোট ছনুয়া এবং কক্সবাজারের সোনাদিয়া ও মহেষখালী দ্বীপ সরেজমিন পরিদর্শন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ওইদিন রূপপুরের ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরুর সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রথমে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) গঠন করা হয়। এর পরই দক্ষিণাঞ্চলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান নির্বাচন সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণের কাজ শুরু হয়। স্থান নির্বাচন হলে প্রাথমিকভাবে দুটি ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রতিটি ইউনিটে ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরুর পরবর্তী ৫ বছরে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সর্বশেষ খবর