শিরোনাম
শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কর-খাজনা বন্ধের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর-খাজনা বন্ধের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু

অসহযোগ আন্দোলনের এক পর্যায়ে এদিনে বঙ্গবন্ধু জারি করেন নতুন নির্দেশ। এই নির্দেশ ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের ৩৫ নম্বর নির্দেশনামা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানানো হয়। নতুন এ নির্দেশের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সব নির্দেশ ও তার ব্যাখ্যা এ নির্দেশের অংশ বলে গণ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের জনগণের নামে প্রদত্ত নির্দেশে বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বত্র কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সেক্রেটারিয়েট ও দফতর, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, হাই কোর্ট এবং অন্যান্য আদালতে হরতাল পালিত হবে। বিভিন্ন সময় নির্দেশের যেসব ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে তা এই নির্দেশের অংশ বলে পরিগণিত হবে। বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ডিসি এবং মহকুমা প্রশাসকরা অফিস বন্ধ রেখে স্ব-স্ব এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে কাজ করবেন। প্রয়োজন হলে উন্নয়নমূলক কাজসহ অন্যান্য কাজও করবেন এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে সহযোগিতা করবেন। পুলিশ বিভাগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে, প্রয়োজনে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সাহায্য গ্রহণ করবে। এ ছাড়াও আনসার বাহিনী, বন্দরগুলো, রেলওয়ে, আমদানিকৃত পণ্য খালাস, শুল্ক বিভাগের করণীয়, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, সৈন্য যাতায়াত ও তাদের রসদপত্রে সহযোগিতা না করা, ডাক ও তার বিভাগের প্রতি নতুন নির্দেশনামায় সময়সূচি নির্ধারণ, শুধু স্থানীয় ও আন্তঃজেলা টেলিফোন চালু রাখার জন্য বলা হয়। খাদ্যশস্য আমদানি, গুদামজাতকরণ, সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় স্থানান্তরের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং সব রকম কর-খাজনা প্রদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অসহযোগ আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। কেননা, আগের দিন উসকানিমূলক ১১৫ নম্বর সামরিক আইন জারি হয়েছে জনগণকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য, ঠিক তার পরের দিনই সে আইনের বিপরীতে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন নতুন নির্দেশ। এতে জনগণের মনোবল আরও সংগ্রামী হয়ে ওঠে। অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে সর্বসাধারণের উদ্দেশে এক দীর্ঘ বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম এগিয়ে চলছে। সমগ্র বিশ্বে যারা মুক্তিকামী এবং জাতীয় মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে চলছে, তারা আমাদের দাবিকে তাদের নিজেদের দাবি বলে গ্রহণ করেছে। যারা শক্তি দ্বারা শাসন করার চক্রান্ত করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দুর্গ তৈরি করতে কতটুকু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন, আমাদের জনগণ তা প্রমাণ করেছে। আজ বাংলাদেশের নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে প্রত্যেকেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার যোগ্যতা অর্জন করেছে। যারা ভেবেছিল, শক্তিমত্তার নগ্ন প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলার জনগণকে দমানো যাবে; বাংলার মানুষ তাদেরকে চূড়ান্তভাবে পর্যুদস্ত করেছে। সরকারি চাকুরে, অফিসার, কর্মচারী, কারখানার শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ অকুণ্ঠ চিত্তে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা আত্মসমর্পণ অপেক্ষা আত্মবলিদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এমতাবস্থায়ও কোনো কোনো অবিবেচক সামরিক আইন নির্দেশ জারি করে বেসামরিক কর্মচারীদের একাংশকে দমিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আজ ঐক্যবদ্ধ আপামর জনগণ সামরিক আইনের কাছে নতি স্বীকার না করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাজেই যাদের প্রতি সামরিক আইনের সর্বশেষ আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ- তারা যেন কোনো প্রকার হুমকির মুখে মাথা নত না করেন। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাদের ও তাদের পরিবারের পেছনে রয়েছে। তাদেরকে ভয় দেখাবার বর্তমান প্রয়াসও বাংলাদেশের জনগণকে ভ্রুকুটি করার প্রচেষ্টার মতোই প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশের মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করা যাবে না। আমরা অজেয়। বঙ্গবন্ধুর এই বিবৃতির পরই দেওয়া হয় নতুন নির্দেশনা। হরতালে অচল হয়ে যায় পুরো দেশ।

সর্বশেষ খবর