রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আদালতে দম্ভ খুনির

এখনো নিখোঁজ তিন বাংলাদেশি, হাসপাতালে আরও পাঁচজন, অস্ত্র আইন পরিবর্তন করবে নিউজিল্যান্ড

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

আদালতে দম্ভ খুনির

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে বর্বর হত্যাকান্ড চালানো ব্রেন্টন ট্যারান্ট আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সেই বহুল সমালোচিত ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ’র চিহ্ন দেখালেন। সাদা চামড়ার মানুষ বা শ্বেতাঙ্গদের অন্য বর্ণের মানুষের চেয়ে সেরা বোঝাতে হাত দিয়ে ‘ওকে’ নামের এই বিশেষ চিহ্ন দেখায় কট্টর বর্ণবাদীরা। আদালতে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় ব্রেন্টন হাতের আঙ্গুল দিয়ে এ চিহ্ন দেখায়। তার মধ্যে ছিল না তেমন অনুশোচনা। আদালতে কোনো কথা না বললেও খুনি ব্রেন্টনের মুখে ছিল আত্মতৃপ্তির নিষ্ঠুর হাসি। আদালত তাকে পুলিশি রিমান্ডে পাঠিয়েছে। নিউজিল্যান্ডে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডে ওই বর্বর হামলার পর থেকে তিনজন বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন আরও পাঁচজন। নিখোঁজরা হলেন- মোজাম্মেল হক, জাকারিয়া ভূইয়া ও শাওন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন লিপি, মুনতাসীম, শেখ হাসান রুবেল, শাহজাদা আক্তার ও ওমর ফারুক। এদের মধ্যে লিপি ও মুনতাসীমের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া নিহত দুই বাংলাদেশি হলেন- কৃষিবিদ ড. আবদুস সামাদ ও হোসনে আরা। তিনি লিংকন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহে। এক সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ঢাকায় ডি-ক্যাবের একটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নিহত বাংলাদেশিদের পরিবার ও আহতদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে অকল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল শফিকুর রহমান ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের দুজন কর্মকতা ক্রাইস্টচার্চে গেছেন। যে কোনো তথ্য বা সাহায্যের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে সবাইকে। এর আগে অকল্যান্ডে বাংলাদেশের কনসালের মাধ্যমে হাইকমিশন বাংলাদেশিদের ও সাধারণ নাগরিক এবং ক্রাইস্টচার্চের বাসিন্দাদের শান্ত থাকতে, ভিতরে থাকতে, ওই স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে এবং আইন প্রয়োগকারীর নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বার্তা পাঠানো হয়।

শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চে আল নূর মসজিদ ও লিনউড মসজিদে এবং আরেকটি স্থানে এ হামলা হয়। এতে ৪৯ জন নিহত হন। বর্বরোচিত হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান দেশটিতে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

সেই বিতর্কিত ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ’র চিহ্ন : নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৯ মুসল্লিকে হত্যাকরী কট্টর ডানপন্থি ব্রেন্টনকে হত্যা মামলায় ক্রাইস্টচার্চের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে নেয় নিউজিল্যান্ডের পুলিশ। আদালতে সাদা পোশাক ও হাতকড়া পরে খালি পায়ে থাকা ট্যারান্টের পক্ষে ছিল না কোনো আইনজীবী। প্রথমে বিচারক তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলার অভিযোগ পড়ে শোনান। পরে আদালত তাকে রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী ৫ এপ্রিল। এ দিন সেখানকার উচ্চ আদালতে তোলা হবে ব্রেন্টনকে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন লঙ্ঘনসহ আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবরে বলা হয়, শুনানির সময় আদালতের বিশেষ অনুমোদনে ছবি তুলছিলেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। তখন ব্রেন্টনকে ঘিরে সতর্ক ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। হাতকড়া থাকায় ব্রেন্টন তার দুই হাত উপরে তুলতে না পারলেও ক্যামেরার ফ্লাশ জ্বলতেই এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে থাকেন সেই বিতর্কিত চিহ্ন। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ একটি বর্ণবাদী ধারণা। যারা এই মতবাদে বিশ্বাস করেন, তারা বলছেন অন্য বর্ণের মানুষের তুলনায় তারাই শ্রেষ্ঠ। আঙুলের মাধ্যমে বিশেষ চিহ্ন তৈরি করে তারা এই প্রতীক প্রকাশ করেন। হাতের আঙুলের বৃদ্ধা ও তর্জনি বৃত্তাকারে যুক্ত করলে তা ইংরেজি বর্ণ ‘পি’ আকৃতি নেয়। এর মাধ্যমে পাওয়ার বা শক্তিকে বোঝানো হয়। আর বাকি তিনটি আঙুল ‘ডাব্লিউ’ হরফের রূপ নিলে তা দিয়ে হোয়াইট বা সাদা বোঝানো হয়।

হাতে ছিল পাঁচ বন্দুক :  নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, ‘হামলাকারীর কাছে পাঁচটি বন্দুক ও একটি লাইসেন্স ছিল। আমাকে জানানো হয়েছে যে, লাইসেন্সটি ২০১৭ সালের নভেম্বরে দেওয়া হয়েছিল। তার কাছে পাওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে দুটি সেমি-অটোমেটিক, দুটি শটগান ও লিভার অ্যাকশন ফায়ারআর্ম।’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্ট ২০১৭ সালের নভেম্বরে লাইসেন্স পেলেও অস্ত্র কেনা শুরু করেছিলেন ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যেহেতু এ ধরনের ঘটনা একের পর ঘটেই যাচ্ছে আর এগুলো ঘটছে লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়েই, তাই আমি ঠিক এই মুহূর্তে আপনাদের বলতে পারি... আমাদের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আসবে।’

‘ট্রাম্পের মনোভাব’কে দুষছেন বিশ্লেষকরা : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার উসকানি হিসেবে পশ্চিমাদের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন ও ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবকে দায়ী করেছেন অনেক বিশ্লেষক।  ট্রাম্প ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে নিজের ইসলামবিদ্বেষ ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন মুসলিম দেশে মার্কিনিদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মুসলিম শরণার্থীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প।

অস্ত্রআইন পরিবর্তন করবে নিউজিল্যান্ড : নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, তার দেশের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে শুক্রবারের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর শনিবার সকালে ওয়েলিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন।

নিখোঁজদের তালিকা করেছে রেডক্রস :  হামলার ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ড রেডক্রস। ওই তালিকায় রয়েছে তিন বাংলাদেশির নাম। এ ছাড়া নিখোঁজের তালিকায় রয়েছে জর্দান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরবের নাগরিক। হামলায় নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক রয়েছে।

প্রতিবাদ বিভিন্ন সংগঠনের : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ঢাকা মহানগরী। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল গতকাল কলাবাগানে সমাবেশে বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, এ হামলা বিশ্ব মুসলিমের ওপর হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর