সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি নিহত বেড়ে ৫ হামলাকারী ছিল একাই

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে সন্ত্রাসী তাণ্ডব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশি নিহত বেড়ে ৫ হামলাকারী ছিল একাই

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার ঘটনায় পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে। কারণ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন এক নারী ও এক যুবক। নিহতদের লাশ ফিরিয়ে আনা বা দাফন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে পরিবারের একজনকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের দুই মসজিদে থাকা বিভিন্ন দেশের মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০-এ। গতকাল থেকেই শনাক্ত হওয়া লাশ

হস্তান্তর শুরুও করেছে নিউজিল্যান্ড। স্থানীয় পত্রিকা নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে বলা হয়েছে, নিহত বাংলাদেশিরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের মো. ওমর ফারুক (৩৬), চাঁদপুরের মোজাম্মেল হক (৩০), নরসিংদীর ইঞ্জিনিয়ার জাকারিয়া ভূঁইয়া, লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের কুড়িগ্রামের অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ (৬৬) ও সিলেটের হোসনে আরা আহমেদ (৪৪)। ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও দুই বাংলাদেশির নিহত হওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আহতদের মধ্যে লিপির অবস্থা সংকটাপন্ন। তার আরও অপারেশন করা প্রয়োজন। কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা লিপির স্বামীর নাম মাসুদ। এ ছাড়া পায়ে গুলিবিদ্ধ মুতাসসিম (গাজীপুর) ও শেখ হাসান রুবেলের অবস্থা বিপদমুক্ত। প্রতিমন্ত্রী জানান, নিউজিল্যান্ড সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে নিহত বাংলাদেশিদের একজন করে স্বজনকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। লাশ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যই স্বজনদের সেখানে নেবে নিউজিল্যান্ড। পরিবারের সদস্যকে বিনা খরচে নেবে নিউজিল্যান্ড সরকার। স্বজনরা লাশ নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষিবিদ সামাদকে তার পরিবার ক্রাইস্টচার্চেই দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে তার বড় ছেলে সেখানে যাবেন। শনাক্ত করার কাজ শেষে রবিবার স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সেমি অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে অস্ট্রেলীয় কট্টর বর্ণবাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। হামলার ঘটনার সময় একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন সদস্য। অল্পের জন্য তারা প্রাণে বেঁচে যান।

হাসপাতালগুলোর চেষ্টার কমতি নেই : বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুসারে, ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে আহত ৩৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অ্যালিন আলসাতি নামের চার বছরের এক মেয়ে শিশুকে অকল্যান্ডের শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের প্রধান সার্জন গ্রেগ রবার্টসন বলেন, হামলাকারী এমনভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন যেন সর্বোচ্চ আঘাত করা যায়। যারা আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের অবধারিতভাবে এই ভয়াবহ আঘাতের দুঃসহ মানসিক স্মৃতি রয়ে যাবে। তবে এই মুহূর্তে তাদের জীবন রক্ষা করার ওপরই জোর দিচ্ছি আমরা। সাধারণ সময়ে ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে দিনে বড় ধরনের তিনটি অপারেশন হয়। সেখানে রবিবার সাতজনের অপারেশন হয়েছে। রাত-দিন কাজ করছেন চিকিৎসকসহ হাসপাতালের কর্মীরা। রবার্টসন জানান, এর আগেও গুলির আঘাতের অস্ত্রোপচার তারা করেছেন। তবে এত ব্যাপকসংখ্যক কখনো করেননি। অনেকের দেহে একাধিক গুলি। হাসপাতালে ভর্তি কোনো কোনো আহত ব্যক্তির একাধিকবার অপারেশন করা হয়েছে। অঙ্গহানি থেকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। শুরুতে হাসপাতালে আনা ব্যক্তিদের বাঁচাতে প্যারেমেডিকরা (জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ আমন নাস শুধু প্যারামেডিকদের তৎপরতায় বেঁচে গেছেন। রবার্টসন বলেন, হাসপাতালে আনার পর মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া যাদের আনা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বেঁচে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আরেক শহরে বোমাতঙ্কে বিমানবন্দর বন্ধ : ক্রাইস্টচার্চের হামলার লেশ না কাটতেই এবার বোমা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের ওটাগোর দুনেদিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। রবিবার বিমানবন্দরে বোমাসদৃশ একটি প্যাকেট দেখা গেলে বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিউজিল্যান্ডের ইংরেজি দৈনিক ওটাগো ডেইলি টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় রবিবার রাত ৮টার দিকে দুনেদিন বিমানবন্দরে বোমাসদৃশ প্যাকেটের খবর আসে পুলিশের কাছে। খবর পাওয়ার পর দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। সন্দেহজনক ওই প্যাকেটটি আসলেও বোমা কিনা তা শনাক্ত করার জন্য বিমানবন্দরে পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানো হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর