বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেকর্ড

উপজেলায় মোট ২২৩ জন বিনা ভোটে, চেয়ারম্যান ১১২ ভাইস চেয়ারম্যান ৫২, নারী ৫৯ ও ৩১ উপজেলায় সবাই

গোলাম রাব্বানী

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। চার ধাপে ৪৫৯ উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত (নারী) ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ১১২, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ৫২ ও সংরক্ষিত (নারী) ভাইস চেয়ারম্যান ৫৯ জন।

নির্বাচন কমিশন বলছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১১২ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ৩১ উপজেলায় সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই ৩১ উপজেলায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ৩১ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক-প্রশাসনিক চাপে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ায় ভোটহীন হয়ে পড়ে ৩১ উপজেলা। আর ভোটবঞ্চিত হয়েছেন এসব উপজেলার ভোটার। উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, নির্বাচন মানেই হচ্ছে একাধিকের মধ্যে বাছাই। তাই যা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, তা নির্বাচন হয় কী করে? ইংরেজিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনদের ইলেকটেড না বলে সিলেকটেড বলা যেতে পারে কি? এ নির্বাচনে আর ভোটের জৌলুস নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রশাসনিক, দলীয় ও বহুমুখী চাপে অনেক উপজেলায় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াটা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন। আর নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ পান। আর ভোট যদি না হয় তবে ভোটাররা ভালো জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে কীভাবে?

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি এক দিনেই দেশের সব উপজেলায় ভোট হয়। তাতে ১২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে পাঁচ ধাপে ভোট হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় দুই ধাপে। শেষে ব্যবধান বাড়িয়ে বেশির ভাগ উপজেলায় জয় পায় আওয়ামী লীগ। এবার দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলার পর এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় গত ১০ মার্চ প্রথম ধাপে নাটোর সদর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহে ভোট হয়নি। ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এমন উপজেলাগুলো হলো- ভোলার সদর, মনপুরা, চরফ্যাশন; বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া; ময়মনসিংহের গফরগাঁও; যশোরের শার্শা ও কুমিল্লার পাঁচ উপজেলা। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুর সদর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও সাভার, নরসিংদীর পলাশ, নোয়াখালীর হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ, ফেনীর পরশুরাম, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, রাউজান ও মিরসরাই এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। এর মধ্যে উল্লাপাড়ায় সংরক্ষিত (নারী) ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া এক প্রার্থী উচ্চ আদালতে রিট করায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর