বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলা

বাংলাদেশিসহ ১০ জন আশঙ্কাজনক

অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণেও সতর্কতা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশিসহ ১০ জন আশঙ্কাজনক

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলায় আহতের মধ্যে এক বাংলাদেশিসহ ১০ জনের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি বাংলাদেশি নারী লিপির। অন্যদিকে নিহতদের লাশ হস্তান্তর শুরু হয়েছে। ন্যক্কারজনক এ হামলার পর নিউজিল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায়কে অভয় দিতে নানানভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সে দেশের সরকার ও জনগণ।

বার্তা সংস্থাগুলোর খবর, নিউজিল্যান্ডের হামলায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, আহতের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। আহতের বেশির ভাগই চিকিৎসা নিচ্ছেন ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে। তবে সংকটাপন্ন এক শিশুকে অকল্যান্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশির মধ্যে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে গুলিবিদ্ধ সাজেদা আক্তার খাতুন লিপিকে (৩০)। অস্ত্রোপচারের পর তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালে লিপিকে দেখতে গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। কটিয়াদী উপজেলার আছমিতা ইউনিয়নের দক্ষিণ অষ্টঘরিয়া গ্রামের জালাল উদ্দিন মোল্লার ছেলে নজরুলের স্ত্রী লিপি। স্বামীর সঙ্গে তিনি ক্রাইস্টচার্চে বসবাস করেন।

এক সপ্তাহ আগে রেকি করে খুনি : হামলার এক সপ্তাহ আগে ওই মসজিদের সামনে হামলাকারী ব্রেন্টনকে পায়চারী করতে দেখেছেন বাংলাদেশি প্রবাসী নাসিম খান। সেদিন মসজিদে হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া নাসিম খান নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ আগে তাকে ডিনস অ্যাভিনিউর মসজিদের সামনের ফুটপাথের সামনে পায়চারী করতে দেখেছি। তখন তার পরনে ছিল নির্মাণশ্রমিকদের মতো পোশাক। তিনি আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। আমি তাকে এড়িয়ে চলেছিলাম।’ নাসিম খানের বোন নাসরিন খানও এক সপ্তাহ আগে লিনউড মসজিদের সামনে হামলাকারীর মতো এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। ওই ব্যক্তি নাসরিনের দিকে তাকিয়েছিলেন; তখন তিনি কিছুটা ভীত হয়ে নিজের গাড়িতে উঠে ম্যাকডোনাল্ডের স্টোরে কর্মরত মেয়েকে নিতে যান। নাসরিন খান বলেন, ‘তিনি আমার দিকেও তাকিয়েছিলেন... আমি খুবই অস্বস্তি বোধ করছিলাম। যে কারণে আমি দ্রুত গাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ি। কেননা আমি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করলে, আমার মেয়ে কীভাবে নিরাপদ থাকবে? পরে আমার মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।’

কোরআন তিলাওয়াতে শুরু নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্ট : ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার পর গতকাল প্রথমবারের মতো বিশেষ পার্লামেন্ট অধিবেশনে বসেন নিউজিল্যান্ডের আইনপ্রণেতারা। এ অধিবেশন শুরু হয় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মুসলিম রীতিতে সালাম দিয়ে ভাষণ শুরু করেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। এদিন তিনি ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও মুসলিমদের প্রতি সম্প্রীতি জানিয়ে এ পদক্ষেপ নেন বলে মনে করা হচ্ছে। ভাষণ দিতে গিয়ে শুরুতেই মুসলিম রীতিতে সবাইকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলেন জাসিন্ডা। বলেন, ক্রাইস্টচার্চ হামলার দিনটি ‘সবার মনে চিরদিন গেঁথে থাকবে।’ এদিন জাসিন্ডা আরডার্ন ক্রাইস্টচার্চ হামলাকারীর নাম মুখে না নেওয়ার শপথ নেন। অন্যদেরও হামলাকারীর নাম মুখে না আনার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, যে ব্যক্তি অন্যদের জীবন কেড়ে নিয়েছে তার নাম না নিয়ে যারা জীবন হারিয়েছেন তাদের নাম নিন।’ এ সময় তিনি ওই হামলার ভিডিও শেয়ার করা বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফরমগুলোকে আরও কাজ করার আহ্বান জানান। আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউজিল্যান্ডের আইন অনুযায়ী হামলাকারী পূর্ণ শাস্তির মুখোমুখি হবেন।

স্বেচ্ছায় অস্ত্র জমা দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীরা : নির্বিচার গুলি করে নামাজরত অর্ধশত মুসল্লিকে হত্যার পর দেশটির নাগরিকরা স্বেচ্ছায় তাদের লাইসেন্স করা বৈধ আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র জমা দিচ্ছেন। দেশটির জাতীয় দৈনিক নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর অনেকে স্বেচ্ছায় তাদের আধা-স্বয়ংক্রিয় গুলি লোড হতে সক্ষম বন্দুক স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে গিয়ে জমা দিচ্ছেন। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ড সরকারও দেশটিতে অস্ত্র আইন কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছে। অনেক অধিবাসী তাদের লাইসেন্স করা আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক জমা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করছেন।

এবার অস্ট্রেলিয়ায়ও ভ্রমণ সতর্কতা : নিউজিল্যান্ডের পর এবার অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল এক বিবৃতির মাধ্যমে এ সতর্কতা জারি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, যেসব বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে এবং যারা সেখানে ভ্রমণে যেতে চান তারা যেন সব সময় সতর্ক থাকেন, বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে। সেখানকার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে গণমাধ্যম এবং স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহের অনুরোধ করা হচ্ছে। ক্যানবেরাতে বাংলোদেশ মিশন তাদের সহায়তার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছে। দুটি নম্বরে ফোন করে তথ্য জানা যাবে। নম্বর দুটি হলো- +৬১৪২৪৪৭২৫৪৪, +৬১৪৫০১৭৩০৩৫।

এর আগে সোমবার নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভ্রমণের বিষয়ে ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি বা ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে বাংলাদেশ। দেশটিতে যারা ভ্রমণের জন্য যেতে চাইছেন তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে এ সতর্কতা নোটিশ জারি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর