শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

জুমার নামাজে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর গতকাল ছিল প্রথম জুমার দিন। আগের জুমার নামাজে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রথম এ জুমাকে স্মরণীয় করে রাখল নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন মাথায় কালো স্কার্ফ পরে এতে অংশ নেন। সূত্র : অনলাইন।

জুমার নামাজের আগে হামলার শিকার আল নুর মসজিদের পাশের খেলার মাঠ ‘হ্যাগলে পার্কে’ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে ও মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানাতে আয়োজন করা হয় এক স্মরণসভার। এতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। নারীদের অধিকাংশই মাথায় স্কার্ফ পরে এ সভায় যোগ দেন। আবার অনেকের হাতে ছিল ফুল। স্মরণসভায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যোগ দেন কালো স্কার্ফ পরে। এ সময় তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, ‘গোটা নিউজিল্যান্ড আপনাদের দুঃখে ব্যথিত। আমরা সবাই এক। আমরা হয়তো আপনাদের দুঃখটা নিয়ে নিতে পারছি না। কিন্তু আমরা আপনাদের প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গী হতে পারি। আমরা একটি দেহের মতো, যখন শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগে তখন পুরো শরীরেই ব্যথা অনুভূত হয়।’ উপস্থিত সবার বিষাদভরা চোখে ছিল ভালোবাসা, সহমর্মিতা।

এদিকে ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলায় নিহত লোকজনের স্মরণে গতকাল দেশটিতে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় রেডিও, টেলিভিশনে আজান প্রচারের পর দেশজুড়ে নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়া মুসলিমদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নিউজিল্যান্ডের অন্য ধর্মের নারীরা মাথায় হিজাব পরেছেন।

নিহত ২৬ জনের দাফন : নিউজিল্যান্ডের জন্য গতকালের দিনটি ছিল শুধুই শোকের। স্থানীয় সময় দুপুরের পর ক্রাইস্টচার্চের মেমোরিয়াল পার্ক কবরস্থানে নিহত ২৬ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ছিল তিন বছর বয়সী একটি শিশুও। মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহত লোকজনের মধ্যে ইবরাহিম নামের শিশুটি সর্বকনিষ্ঠ। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাফনের পর ধীরে ধীরে নিহত লোকজনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হবে। দাফনের সময় কবরস্থানে পাহারারত এক নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে কালো কাপড়ে মাথা ঢেকে অটোমেটিক রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

মাথা ঢেকে মুসলমানদের প্রতি সংহতি : ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত মুসলমানদের প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানাতে গতকাল জুমার দিনে নিউজিল্যান্ডজুড়ে হাজারো নারী মাথা ঢেকে বের হন। ঠিক এক সপ্তাহ আগে উগ্র ডানপন্থি এক অস্ট্রেলীয় ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তার পর থেকে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে পারেন এমন আতঙ্কে দেশটির মুসলমান নারীরা হিজাব পরে ঘর থেকে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। বিষয়টি জানতে পেরে অকল্যান্ডের চিকিৎসক থায়া অ্যাশম্যান ‘হেডস্কার্ফ ফর হারমনি’ নামে একটি আন্দোলনের ডাক দিয়ে নিউজিল্যান্ডের জনগণকে মুসলমানদের প্রতি সমর্থন জানাতে শুক্রবার মাথা ঢেকে বাইরে বের হওয়ার আহ্বান জানান। অ্যাশম্যান বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছি, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। আমরা চাই আপনার নিজের রাস্তায় আপনি বাড়ির মতো নিরাপদ বোধ করুন। আমরা আপনাকে ভালোবাসি, সমর্থন করি ও সম্মান করি।’

এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢাকা ছবি পোস্ট করেন। ক্রাইস্টচার্চের বাসিন্দা বেলি সিবলি বলেন, ‘কেন আমি আজ মাথা ঢেকেছি? প্রথম কারণ হচ্ছে, যদি আজ কেউ বন্দুক তুলে কাউকে নিশানা করে তবে আমি তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাব এবং আমি চাই সে যেন পার্থক্য করতে না পারে। কারণ, আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’

নিউজিল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকেই হত্যার হুমকি : দুটি মসজিদে হামলার ঘটনায় যখন গোটা নিউজিল্যান্ড শোকাহত, তখন  দেশটির খোদ প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নকেই দেওয়া হয়েছে হত্যার হুমকি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে এ হুমকি দেওয়া হয়। খবর : নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের। জানা গেছে, গতকাল বন্দুকের একটি ছবি দিয়ে ‘পরবর্তীতে আপনি’ ক্যাপশন লেখা একটি টুইট প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড বলছে, তারা এটা বুঝতে পেরেছে যে, ওই টুইটার অ্যাকাউন্টটি হত্যার হুমকি দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে ‘পরবর্তীতে আপনি’ ক্যাপশনসহ বন্দুকের একটি ছবি দিয়ে করা আরেকটি পোস্ট প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন ও নিউজিল্যান্ড পুলিশকে ট্যাগ করা হয়েছে।

বাতিল করে দেওয়া ওই অ্যাকাউন্টটিতে ইসলামবিরোধী বিষয় ও  শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যবাদী বিভিন্ন ঘৃণাসূচক বক্তব্য ছিল।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা হেরাল্ডকে বলেছেন, টুইটারের ওই কমেন্ট সম্পর্কে পুলিশ অবগত এবং এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর