সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

অশ্রুজলে চিরনিদ্রায় কিংবদন্তি শাহনাজ রহমতুল্লাহ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

অশ্রুজলে চিরনিদ্রায় কিংবদন্তি শাহনাজ রহমতুল্লাহ

অগণিত ভক্ত ও সুহৃদদের অশ্রুজলে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় বারিধারায় নিজ বাসায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।  মেয়ে নাহিদ রহমতুল্লাহ লন্ডনে, আর ছেলে সায়েফ রহমতুল্লাহ থাকেন কানাডায়। তবে দুই ছেলে-মেয়ের অপেক্ষায় না থেকেই বাদ জোহর বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বনানীর সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে দাফন করা হয় নন্দিত কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহকে। এর আগে বাদ জোহর বারিধারার ৯ নম্বর রোডের পার্ক মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন গীতিকার ও চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জাসাসের শায়রুল কবিরসহ সংগীতাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহনাজের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। আরও শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শিল্পীর মৃত্যুতে তার বারিধারার বাসায় শনিবার রাত থেকেই দেশের সংগীতাঙ্গনের মানুষের ভিড় জমে যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে একটি দল শিল্পীর বাসায় যায়। গীতিকার ও বিএনপির উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, দলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক চিত্রনায়ক উজ্জ্বল ও দলের চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরসহ আরও কয়েকজন পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। ছেলে-মেয়ের অপেক্ষায় না থেকে দাফনের সিদ্ধান্ত  প্রসঙ্গে শাহনাজ রহমতুল্লাহর স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমতুল্লাহ বলেন, ‘যে গেছে তাকে তো আর ফেরানো যাবে না। ছেলে কবে আসতে পারছে তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ টিকিট পাওয়ার বিষয় আছে। সে এলে দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’ তবে একমাত্র মেয়ে লন্ডন থেকে আসছেন কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। দেশকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন কিংবদন্তি এই গানের পাখি। ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’ ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’ ‘সাগরের তীর থেকে’ ‘খোলা জানালা’ তা থেমে গেছে’ ইত্যাদি কালজয়ী অসংখ্য গান এদেশের সংগীতাঙ্গনকে করেছে সমৃদ্ধ।

উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সংগীতের এই কিংবদন্তি শিল্পী। তিনি ছিলেন বিটিভির প্রথম দিনের শিল্পী। গানের জগতে পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে রেডিও, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রের অসংখ্য গানের পাশাপাশি শাহনাজ রহমতুল্লাহর অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে চারটি। প্রথমটি ছিল প্রণব ঘোষের সুরে ‘বারটি বছর পরে’। তারপর প্রকাশিত হয় আলাউদ্দীন আলীর সুরে ‘শুধু কি আমার ভুল’। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

 বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পায়। এর মধ্যে আনোয়ার পারভেজের সুর করা দুটি গান, খান আতাউর রহমান ও আবদুল লতিফের সুরে দুটি ভিন্ন গান রয়েছে। শাহনাজ রহমতুল্লাহর বড় ভাই সুরকার আনোয়ার পারভেজ, আরেক ভাই নায়ক ও গায়ক জাফর ইকবালও প্রয়াত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর