সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আজ সেই ২৫ মার্চের গণহত্যার কালরাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ সেই ২৫ মার্চের গণহত্যার কালরাত

আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতিসহ বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংসতা। গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে পাকিস্তানি দানবরা অত্যাধুনিক অস্ত্রে

সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। রক্তের নেশায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে তারা। ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকা ই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্বসভ্যতার জন্য এক কলঙ্কজনক বিভীষিকাময় গণহত্যার সূচনা মাত্র। রাজধানী ঢাকায় দিন শেষে কর্মক্লান্ত নিরীহ মানুষ যখন ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন, তখন তাদের হত্যার জন্য পথে নামে জলপাই রঙের ট্যাংক আর সাঁজোয়া বহর। হিংস্র শ্বাপদের মতো ধেয়ে যায় চারদিকে। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নির্মমভাবে হত্যা করে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক ঘুমন্ত বাঙালিকে। ২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া সেই নিধনযজ্ঞ চলেছে টানা ৯ মাস। তাদের সেই নিধনযজ্ঞে সহযোগী হিসেবে যোগ দেয় এ দেশেরই কিছু ঘাতক দালাল। পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য তারা গঠন করে রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী। তাদের সহযোগিতায় ঘরে ঘরে গিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। ফলে দ্রুত বড় হতে থাকে লাশের স্তূপ। এদিন দফায় দফায় ব্যর্থ হয় বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া সিরিজ বৈঠক। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে সন্ধ্যায় গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। মধ্যরাতে হিংস্র হায়েনার মতো ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী।

স্বাধীনতাকামী বাঙালির সংগ্রামের মেরুদ  ভেঙে দিতে সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু গ্রেফতারের আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শেষ শত্রু বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন-প্রতিরোধের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পাকসেনাদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসে সেনা ও পুলিশ বাহিনীর বাঙালি সদস্যরাও। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদ্বয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বর্বরতম এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’ জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে পঁচিশে মার্চের সেই কালরাতে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার অগণিত শহীদকে। রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কালরাত’ স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিনভর থাকছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাতে মোমবাতি প্রজ্বালন।

সর্বশেষ খবর