মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভয়াল কালরাত স্মরণে এক মিনিট অন্ধকারে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়াল কালরাত স্মরণে এক মিনিট অন্ধকারে দেশ

৭১-এর ভয়াল কালরাত স্মরণে গত রাতে ১ মিনিটের ব্ল্যাকআউট ছিল সারা দেশে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাত ৯টা। একে একে নিভে যেতে থাকে সব আলো। এভাবে ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবসকে স্মরণ করে দেশব্যাপী প্রতীকী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করল দেশবাসী। সরকারি আদেশের অংশ হিসেবে গত রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে এ ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করা হয়। রাজধানীতে ব্ল্যাকআউটের প্রধান স্থান ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ঘড়ির কাঁটায় ৯টা বাজতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ল্যাম্পপোস্টের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় সবাই ১৯৭১ এর গণহত্যার ভয়াল মুহূর্তকে স্মরণ করেন। ১ মিনিট পরই স্বাধীনতার ৪৮ বছর উপলক্ষে মশাল প্রজ্বালন করা  হয়। পরে সবাই মশাল হাতে আলোর মিছিল নিয়ে জগন্নাথ হল অভিমুখে রওনা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, শিল্পী হাশেম খান, মুনতাসীর মামুনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্টজনরা। তারা এ সময় মশাল হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এদিকে ঘড়ির কাঁটায় রাত ৯টা বাজতেই নিভে যায় জগন্নাথ হলের সব লাইট। মাইকে ভেসে আসে গোলাগুলির শব্দ, আর সন্ত্রস্ত মানুষের আর্তনাদ। এ ছাড়া রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, পুরানা পল্টন এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতীকী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। জরুরি স্থাপনা ও চলমান যানবাহন ছাড়া প্রতীকী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করে তারা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্ল্যাকআউট নিয়ে তৎপর ছিল।

কালরাতে প্রতীকী আলো নিভিয়ে শহীদদের স্মরণের এই কর্মসূচি পালিত হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে। এদিকে ২৫ মার্চের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান।  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী প্রজন্মকে সেদিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, আলো জ্বেলে আমরা যেমন স্মরণ করি তেমনই দেশকে প্রতীকী অন্ধকার করে সেই ‘কালরাত’র ভয়াবহতা বুঝতে আমাদের সহায়তা করবে। কী ভীষণ বিভীষিকার ছিল সেদিন। ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যা সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোচনা সভা, নাটকসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কালরাত স্মরণ করা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর, মানিক মিয়া এভিনিউ, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন স্থানে গত রাতে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কালরাতের ভয়াবহতা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হয়।

আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ২৫ মার্চ রাতে যে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তার ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শাসম বাহিনী। তাদের সহযোগিতায়ই ঘরে ঘরে চলে হত্যাযজ্ঞ। শুধু ২৫ মার্চ রাতেই ঘুমন্ত বাঙালি নারী-পুরুষের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় অর্ধলাখ নিরস্ত্র মানুষকে। ৯ মাস দেশের গ্রামগঞ্জে ছিল লাশের স্তূপ। এই সময়ে সারা দেশে ৩০ লাখের বেশি নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর