মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নৌকা ডুবেছে ৭৮ উপজেলায় জিতেছে বিদ্রোহী

রফিকুল ইসলাম রনি

তিন ধাপে এ পর্যন্ত ৩১৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ উপজেলায় ডুবেছে নৌকা। চেয়ারম্যানপদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বিএনপির বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন তিনজন। জাতীয় পার্টির চারজনসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র বিজয়ী হয়েছেন ১৬ জন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ২১৫টিতে। বিএনপিবিহীন ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজয়ের নেপথ্যে কারণ হিসেবে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী    মনোনয়নে  ভুল সিদ্ধান্ত। একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী ও জেলা নেতাদের বিরোধিতা। যেখানে বিএনপির প্রার্থী নেই সেখানে নৌকার বিদ্রোহীদের পক্ষে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের কাজ করা। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দূরে ঠেলে দেওয়া প্রভৃতি কারণে এসব উপজেলায় পরাজয় হয়েছে। এ ছাড়া কমপক্ষে দেড় ডজন এমপি ও জেলার নেতার বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রীও রয়েছেন।

জানা যায়, গত ১০ মার্চ ৮৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও আদালতের আদেশে ৬টিতে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনটিতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে সবাই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। ফলে ৭৮টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৫৫ জন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন ১৯ জন প্রার্থী। গত ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ১১৬ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের ৭৫ জন বিজয়ী হন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হন ২৮ জন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত একজন, জাতীয় পার্টি একজনসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন মোট ১০ জন। তৃতীয় ধাপে ১২২ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয় গত ২৪ মার্চ। এর মধ্যে ৪টি উপজেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন চারজন। ১১৭টি উপজেলার মধ্যে ৮৩টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং ৩১টিতে বিজয়ী হন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। বাকি ৬টির মধ্যে গোপালগঞ্জের ৫টি উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। ফলে সেখানে স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

নৌকা প্রতীকের ভরাডুবির কারণ হিসেবে দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, অনেক জেলা-উপজেলা নেতারা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করায় বিদ্রোহীরাসহ অন্যরা বিজয়ী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপির অংশগ্রহণ না করায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব দেখানো হয়েছে। কেন্দ্র চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ভোট উৎসব করতেই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দেশে এখন বিএনপির জনসমর্থন নেই। সে কারণে তারা উপজেলায় অংশ নেয়নি। আমরা চেয়েছি, উৎসব মুখর পরিবেশে উপজেলায় ভোট হোক। তাই বিদ্রোহীদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখানো হয়েছে।

সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলের কারণে অনেক উপজেলায় নৌকা ডুবেছে। এর মধ্যে জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তি, রাজাকারপুত্র, হাইব্রিডদের মনোনয়ন দেওয়ায় অনেকেই বিএনপি বিহীন এ নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারেননি। সিলেটে কুখ্যাত আবদুল ওয়াজিদ টেনাই রাজাকারের ছেলে লিয়াকত আলীকে জৈন্তাপুরে এবং একাত্তরের থানা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক আজির উদ্দিনের ছেলে গোলাম কিবরিয়া হেলালকে গোয়াইনঘাটে নৌকায় মনোনয়ন দেওয়া হয়। দুজনেই পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের কাছে। জৈন্তাপুরে বিজয়ী হয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমদ। গোয়াইনঘাটে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক। অন্যদিকে স্থানীয় এমপি ও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণেও নৌকা ডুবেছে অনেক উপজেলায়। কক্সবাজারের রামুতে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন উপজেলা সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। কিন্তু সেখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন রিয়াজ উল আলম। তিনি স্থানীয় এমপির পছন্দের প্রার্থী বলে প্রচার রয়েছে। দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হয়েছিলেন সোহেল সরওয়ার। তিনি বিজয়ী হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সোহেল সরওয়ার কাজল সাংবাদিকদের বলেছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় এমপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণেই দলীয় কর্মীরা এমপি সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আর এমন সুযোগে এমপি বিরোধী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাল্লাও ভারী হয়ে ওঠে। এ কারণেই নৌকা মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটে।

সর্বশেষ খবর