শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

উদ্ধারে নেই আধুনিকতা

সাঈদুর রহমান রিমন

ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি সংস্থাগুলো বড় বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তা নিয়ে সফলতার স্বাক্ষর রাখলেও নগরকেন্দ্রিক

দুর্যোগে তারাই বার বার দিশাহারা হয়ে পড়ছে। ভবন ধস ও বহুতল ভবনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার কাজে কাক্সিক্ষত সফলতা মিলছে না। অভিযানে নেই অন্যান্য দেশের মতো আধুনিকতার ছোঁয়াও। ভারি মেশিনারিজসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার কাজে প্রচুর সময়ক্ষেপণ ঘটছে, জানমালের সর্বোচ্চ ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। উদ্ধার কর্মীরা রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে, জীবনবাজি রেখেও শুধু ভারি মেশিনারিজের অভাবে কাক্সিক্ষত সফলতা পান না। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কাছে স্বল্প দামের জাম্পিং কুশন পর্যন্ত নেই। ৩০ সেকেন্ড থেকে ৫৫ সেকেন্ডের হাওয়া দিয়েই বিশাল আকৃতির কুশনটি তৈরি করা যায় এবং বহুতল ভবনগুলো থেকে সেই কুশনের ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ে বিপদাপন্ন মানুষ জীবন বাঁচাতে পারেন। বনানীর আগুন লাগা ২৩ তলার এফআর ভবনের পাশে এমন রেসকিউ জাম্পিং কুশনের ব্যবহার করা গেলে বহু মানুষ লাফিয়ে পড়ে রক্ষা পেতেন। তাছাড়া জাম্পিং কুশনগুলো একটার পর একটা সাজিয়ে তিন-চার তলা সমান উঁচু করেও মানুষকে নামিয়ে আনা সম্ভব ছিল। দেশের সব দুর্যোগে জানমাল রক্ষাসহ বিপদাপন্ন মানুষকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালনকারী ফায়ার সার্ভিস বিভাগটির কাছে মাত্র ১১তলা উচ্চতার মই রয়েছে। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকেই রাজধানীতে ২০ তলা বা ততধিক তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে অসংখ্য। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধারকারী সংস্থার কেউ আরও উচ্চতার মই বা লিংকেজ মই পর্যন্ত নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। তাছাড়া রশির মই বানিয়েও বিপদাপন্ন মানুষকে উদ্ধারের উদ্যোগটিও কার্যকর করতে দেখা যায় না কোথাও। রশির মই দিয়ে বহু উচ্চতার এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যাওয়ার এবং রশিতে হাতল লাগিয়ে তা ধরে অনেক উচ্চতা থেকে অনায়াসে নিচে নামার পদ্ধতিও ব্যবহার হচ্ছে না। এসব পদ্ধতি কেবল ফায়ার সার্ভিসের নানা প্রশিক্ষণেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।বড় রকমের যে কোনো অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে সারা বিশ্বে সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ফায়ার বল।’ ওজনে হালকা, যত্রতত্র বহনযোগ্য এবং খুব সহজেই ব্যবহারযোগ্য এ ফায়ার বল খুব দ্রুত আগুন নেভাতে সক্ষম। ‘নন-টক্সিক মনো-অ্যামোনিয়াম ফসফেট’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক পাউডার দ্বারা পরিপূর্ণ বলটি আগুনের সংস্পর্শে এলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। চীনে প্রস্তুতকৃত ফায়ার বল আমদানির ব্যাপারে ১০ বছর ধরেই ফায়ার সার্ভিস পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা দিয়ে আসছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ফায়ার বল আমদানি করা হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে অসংখ্য আকাশচুম্বী দালানকোঠা গড়ে উঠেছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় সেতু এবং অবকাঠামো। এসব উঁচু ভবনে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ চালানোর মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই বললেই চলে। ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ হলে রাস্তা পরিষ্কারের জন্য যেসব ভারি ইক্যুইপমেন্ট প্রয়োজন তা নেই ফায়ার সার্ভিসের কাছে। এগুলো দিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করাসহ ধসে পড়া ভবনের জঞ্জাল স্তূপ দ্রুত সরিয়ে মুহূর্তেই উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব হয়। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও লোকবলের ঘাটতি রয়েছে। স্বল্প লোকবল ও যন্ত্রপাতি নিয়েই সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলে অবিরাম। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট যে কোনো দুর্যোগের ভয়াবহতা মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন সবার আগে। উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থার সমন্বয় হলে দ্রুত সফলতা পাওয়ার অনেক নজির রয়েছে দেশে। সরকারিভাবে দুর্যোগ-পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করতে ইতিমধ্যে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তবে ভবন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি সংস্থাগুলোর অবহেলা, অনিয়মের কারণে দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। সেজন্য সর্বশেষ দুর্ঘটনার জের ধরে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হবে বলে আশা করছেন রাজধানীবাসী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর