শিরোনাম
শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

হাসপাতালে তারা বাকরুদ্ধ

আলী আজম

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জন নিহত ও ১২০ জন আহত হয়েছেন। বেঁচে যাওয়া অনেকে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন। কীভাবে বেঁচে এসেছেন তা জানতে চাইলেই অশ্রু ঝরাচ্ছেন। বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা বেঁচে আছেন। চিকিৎসা নিলেও আহতরা মনে করছেন ঘটনাস্থলে তারা রয়েছেন। বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় ওই ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। গতকাল আহত সবুজ ও আবু হোসেনের কথায় এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি আহত রেজওয়ান আহমেদ সবুজ জানান, ‘এফআর টাওয়ারের ২১, ২২ ও ২৩ তলায় কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অফিস। আমি ওই অফিসের একজন কর্মকর্তা। ঘটনার সময় আমি ২১ তলায়ং ছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ছাদের দিকে চলে যাই। গিয়ে দেখে ছাদের দরজায় তালা। পরে এসির পাশের একটি গ্লাস ভেঙে ফেলি। এরপর পাইপ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করছিলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি দুজন দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আমি ভয়ে শিউরে উঠি। আগুনের তাপ বাড়তে থাকে। নির্ঘাত মৃত্যু- এ কথা ভাবতে থাকি। পরে চিন্তা করলাম আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে লাফ দিয়ে মরা ভালো। একসময় আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে লাফ দিই।’ তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার পুরো শরীরে ছিলা, পোড়া ও আঘাত রয়েছে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল আর কথা আটকে যাচ্ছিল। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে রয়েছেন। সবুজের মামা রিপন জানান, ‘মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নগর খুরশাইন গ্রামে সবুজদের বাড়ি। থাকে ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরে খালার বাসায়। তার স্ত্রী শিথিলা গ্রামে থাকে। সে প্রতি বৃহস্পতিবার অফিসের কাজ শেষ করে গ্রামের বাড়ি যেত। ঘটনার দিনও অফিস শেষ করে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। আগুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সে আমাদের জানিয়েছে, আগুন যেন তাকে তাড়া করে ফিরছে। দুই চোখ বুজলেই আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাচ্ছে।’ ঢামেক হাসপাতালে আহত আবু হোসেন জানান, ‘এফআর টাওয়ারের ১৩ তলায় আমরা ২০-২৫ জন আটকা ছিলাম। আমার অফিস ছিল ১২ তলায় ডার্ট গ্রুপ অব কোম্পানিজে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আমরা আগুনের খবর পাই। কিন্তু তখন কোনো অ্যালার্ম ছিল না। ফায়ার অ্যালার্মটা আগে থেকেই নষ্ট ছিল। ১৩ তলায় ধোঁয়ার কারণে আমাদের প্রচ  শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন আমরা চেয়ার দিয়ে জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলি। বেঁচে থাকার জন্য সামান্য অক্সিজেন পাচ্ছিলাম। আর এর পরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করেন।’ ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে তিনি এফআর টাওয়ার থেকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে তিনি সুস্থ আছেন। থাকেন মুগদায়। আবু হোসেন আরও বলেন, ‘শেষ সময় ১২ তলা থেকে ১৩ তলায় যাওয়ার পর প্রচন্ড  তাপ ও ধোঁয়ার সম্মুখীন হয়েছিলাম আমরা। অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। তাই সেখান থেকে আর এগোতে পারছিলাম না। তা ছাড়া আমাদের মধ্যে অনেকেই ওপরে ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে ছাদের গেট তালাবদ্ধ। তাই তারা আবার নেমে আসে। পরে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে উদ্ধারকর্মীরা নেমে ছাদের গেট ভেঙে ফেলেন এবং আমাদের সহকর্মীদের উদ্ধার করেন। আর আমরা কয়েকজন ওই জানালার গ্লাস ভেঙে অক্সিজেন পাওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় নেমে আসি। ওই গ্লাস না ভাঙতে পারলে হয়তো আমরা অক্সিজেনের অভাবে সেখানেই মারা যেতাম।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র বলছেন, এফআর টাওয়ারে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে লাগা টানা ৬ ঘণ্টার আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫-এ দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনায় ১২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন তার বেশির ভাগই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে ৭, ঢামেক বার্ন ইউনিটে ৬, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১১, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৫, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩, ইউনাইটেড হাসপাতালে ১৫, এ্যাপোলো হসপিটালসে ৬, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর