শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

হিসাব মেলাতে পারছে না বিএনপি

মাহমুদ আজহার

হিসাব মেলাতে পারছে না বিএনপি

কোনো কিছুরই হিসাব মেলাতে পারছে না বিএনপি। দলটিও চলছে উদ্দেশ্যহীন পথে। ভোটের তিন মাস পরও কার্যকরভাবে দল গোছাতে পারেনি। বিএনপি-প্রধান কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে কার্যকর কোনো কিছুই করতে পারছে না দলটি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গিয়েছিল বিএনপি।

কিন্তু এরপর আন্দোলন থেকে সরে এসে শুধু নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন নেতারা। ভোটে শোচনীয়ভাবে পরাজয় হয় তাদের। এরপর তিন মাস চলে গেলেও দলের হাইকমান্ড বুঝে উঠতে পারছেন না, তারা এখন কী করবেন? সেই সঙ্গে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন থেকে শুরু করে বিগত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন, চলতি উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে হিসাব মেলাতে পারছেন না দলের অনেক সিনিয়র নেতা। বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন আইনি প্রক্রিয়ায় না রাজপথের আন্দোলনে মিলবেÑ তারও হিসাব মেলাতে পারছেন না। অতীতে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। এবার উপজেলা ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল ছিল, তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে দলের নেতারা। জামায়াত ইস্যুতে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাই বলছেন, ২০-দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দলের ছয় এমপির শপথ নেওয়া-না নেওয়া সম্পর্কেও কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে ভোটাধিকার হরণ হয়েছে তা শুধু বাংলাদেশের জনগণই নয়, সারা বিশ্বই জানে। এরপর বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর এ ধরনের ভোটবিহীন নির্বাচনে গঠিত সংসদও জনগণের পক্ষে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না। তাই আমরা কয়েকজনও শপথ নিচ্ছি না।’ জামায়াত ছাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ জানা যায়, সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেগম জিয়ার মুক্তি বিষয়ে সদস্যদের কেউ কেউ দল গুছিয়ে রাজপথের আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আবার কেউ কেউ আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তির কথা বলেন। জামায়াত প্রসঙ্গেও কথা ওঠে স্থায়ী কমিটিতে। কোনো কোনো সদস্য জামায়াতকে এ মুহূর্তে ছাড়ার পরামর্শ দেন। যারা দীর্ঘদিন জামায়াতের পক্ষে কথা বলতেন তারাই জামায়াতকে ছাড়ার কথা বলেন। তবে স্থায়ী কমিটিতে যারা জামায়াতবিদ্বেষী ছিলেন, তারা বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ভোট হয়েছে তাতে এ মুহূর্তে জামায়াত কোনো ফ্যাক্টর নয়। এখন দেশে একদলীয় দুঃশাসন চলছে। তা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এসব মতামত প্রবাসী নেতা তারেক রহমানকে অবহিত করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি এখন দল গোছানোর কাজে আছে। দলের অসম্পূর্ণ কমিটি, অঙ্গসংগঠনগুলো গুছিয়ে আমরা বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার করব।’ জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া নিয়েও বিএনপি নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন। এক পক্ষ বলছেন, বিএনপি যত নির্বাচনে অংশ নেবে, সরকারের মুখোশ তত উন্মোচিত হবে। তা ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আরও চাঙ্গা হবেন। আরেক পক্ষ বলছেন, উপজেলা ভোটে গেলে সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের মতোই ভরাডুবি হবে। এতে প্রার্থীদের অযথা টাকা ব্যয় ও মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ওপর নতুন করে মামলা-হামলার খড়্গ নেমে আসবে। পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের ১৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাে  জড়িত- এমন অভিযোগ এনে তাদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়েও বিএনপির ভিতরে-বাইরে ঝড় বইছে। বিএনপির বড় একটি অংশই বলছে, এটা সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আরও ঝিমিয়ে পড়বেন। অবশ্য আরেক পক্ষ বলছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা ভোটে অংশ নেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। এদিকে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোট করে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনার মুখে তারা। দলটির সঙ্গ ছাড়তে দেশি-বিদেশি শক্তি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপিকে চাপের মুখে রেখেছে। কিন্তু কৌশলগত কারণে চাপের মধ্যেও জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক এখনো ছাড়েনি দলটি। এ নিয়ে প্রতিনিয়তই নানা মহলের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ ছাড়া শরিকদের অবমূল্যায়ন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে অধিক গুরুত্ব দেওয়াসহ নানা কারণে ২০-দলীয় জোটের মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলেছে। অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে ২০ দল। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়েও নতুন করে অস্বস্তিতে পড়ে বিএনপি। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য সম্প্রতি শপথ গ্রহণের পর বিএনপি অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেক সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ার অপেক্ষায়। এ মুহূর্তে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন কিনাÑ তা নিয়েও দলের ভিতরে-বাইরে নানা মত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণফোরামের এক সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার পর বিএনপি খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে। কারণ, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল, শুরুতেই তাতে বিঘœ ঘটছে। গণফোরামের আরেক নেতাও সম্ভবত শপথ নেবেন। এ দুই নেতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গণফোরাম ব্যর্থ হয়েছে। এতে ঐক্যফ্রন্টে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি ঘটলেও তা সাময়িক। এটা কাটিয়ে ওঠাও সম্ভব বলে আমি মনে করি।’

সর্বশেষ খবর