আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, এখন বাকশাল প্রতিষ্ঠার কোনো প্রয়োজন নেই। একানব্বই সালে আমরা বিরোধী দলে থেকেই সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা : ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, অনেককে দেখেছি, যারা মুখে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে বড় বড় কথা বলেন, আবার জামায়াতের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখেন। এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে বিএনপি-জামায়াত। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে নির্মূল করতে হলে ওদের নির্মূল করতে হবে। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, হ্যাঁ-না ভোট যারা করেছে, মার্শাল ল’ যারা দিয়েছে, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারাই নিজেদেরকে নিজ ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচিত করেছেন, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে করে থাকলে এটা এখনো রেখেছেন কেন? এটা বন্ধ করে দেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় ঐক্য দৃঢ় করতে হবে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ধর্মের নামে বৈষম্য, ধর্মের নামে গণতন্ত্র হরণ, ভোটাধিকার হরণ ও বিদেশি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়।
বহু সংগ্রামের মাধ্যমে সেই অপশক্তিকে রুখে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সংবিধানে এখনো অসঙ্গতি রয়েছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, রবরা গণতন্ত্রের মুখোশ পরা রাজাকারের নব্য দালাল। আরেকবার রাজাকারদের সরকার যাতে না আসে সে ব্যবস্থা করতে হবে। শূন্য সহিষ্ণু নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে ক্ষমতাচ্যুত বিএনপি-জামায়াত চক্র ধ্বংস করা ছাড়া উপায় নেই।
ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ধারায় চিন্তার বিভক্তি আছে উল্লেখ করে শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, হার্ড লাইন, আর সফট লাইন হোক অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঐক্য জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছি, যা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শক্তি জোগাচ্ছে।মূল প্রবন্ধে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতাসহ বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি সংবিধানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রধর্মসহ কিছু সাংবিধানিক অসঙ্গতি রয়ে গেছে। এগুলো দূর করে আমাদের সামনে অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। তাই ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
কামাল লোহানী বলেন, হেফাজতের কারণে পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা বাদ দিতে হবে। মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়েই ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে হবে।
এ ছাড়া গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে বিএনপি-জামায়াত। তারা নিস্তেজ হয়েছে। কিন্তু নির্মূল হয়নি। সুযোগ পেলে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে নির্মূল করতে হলে ওদের নির্মূল করতে হবে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, লেখক মফিদুল হক, অধ্যাপক এম এম আকাশ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা কাজল দেবনাথ প্রমুখ।