সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যাংক সুদ কমাতে বাধা কোথায়

মানা হচ্ছে না সিঙ্গেল ডিজিট হারের নির্দেশনা

মানিক মুনতাসির ও আলী রিয়াজ

ব্যাংক সুদ কমাতে বাধা কোথায়

হাজারও চিঠি চালাচালি, বহু নির্দেশনা আর অসংখ্যবার বৈঠক করেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি সব ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকের মালিক, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কয়েক বছর ধরে বার বার বৈঠক করলেও ফলাফল শূন্যই থেকেছে। এমন কি সব তফসিলি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংক ঋণের সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তাও মানেনি কেউই। তবে দু-একটি ব্যাংক কোনো কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংক ঋণের সুদহার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ব্যাংকিং সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে ঋণখেলাপিদের ৭ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধে সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছেন। যদিও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে এখনো এক মাস বাকি। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১ মে থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো নথির তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত একটি ব্যাংকও সিঙ্গেল ডিজিট সুদে শিল্পঋণ দেয়নি। যদিও দাবি করা হচ্ছে, ৯টি ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে শিল্পঋণ বিতরণ করছে। বাস্তবে এসব ব্যাংকও ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ আদায় করছে। এ ছাড়া নিজেদের ডিপোজিট বাড়াতে এবং রিপোর্ট ভালো দেখাতে আমানতের সুদ হারের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেট ৬ শতাংশ মানছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে ব্যাপারটা আমরা দেখছি। কয়েক দিন আগে আমরা বসেছিলাম, কীভাবে ব্যাংকের সুদের হার কমানো যায়। একই সঙ্গে আমার এটাও অনুরোধ থাকবে- যারাই ঋণ নেবেন, আপনারাও যদি টাকাটা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন বা সুদটা পরিশোধ করেন, তাহলে ব্যাংকগুলো সচল থাকে। তখন কিন্তু সুদের হার কমানোটা খুব একটা কঠিন হবে না।’ ঋণের উচ্চ সুদের হার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও করে দিলাম। যেমন আগে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে আর ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হতো। ব্যাংকের মালিকরা বললেন- এটা যদি ফিফটি ফিফটি করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। সেটাও কিন্তু করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম এবং দিলাম। কিছু ব্যাংকে ঠিকই সুদের হার ৯ পার্সেন্টে নামানো হলো। কিন্তু সবাই তা করল না। বাড়াতে বাড়াতে ১৪, ১৫, ১৬-তে নিয়ে গেল। কেন করল না তাদের এ সুযোগটা দেওয়া সত্ত্বেও?’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমার এখানে প্রশ্ন, এই ব্যাংকের মালিক যারা তাদেরও তো শিল্প-কলকারখানা আছে। তারাও তো ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। এখন আমাকে তো সেই জায়গাটায় আগে হাত দিতে হবে। তারা ব্যাংকও চালাচ্ছেন, শিল্পও চালাচ্ছেন- আবার তারা সুদের হার কমাবেন না। তাহলে তাদের ব্যবসা কী কী আছে না আছে, ট্যাক্সটা ঠিকমতো দিচ্ছেন কিনা, ভ্যাট ঠিকমতো দিচ্ছেন কিনা, কাঁচামাল ঠিকমতো আছে কিনা- দেখতে হবে।’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না দেওয়া আরেকটা প্রবণতা। এ প্রবণতাটাও দূর করতে হবে। ব্যাংকের যে টাকা, এ টাকার মালিক তো জনগণ। বেসরকারি খাতে আমরা ব্যাপকভাবে ব্যাংক করার সুযোগ করে দিয়েছি। আমার সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক-বীমা করার সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়েছি। ব্যাংক শুধু দিলেই হবে না। মানুষের মধ্যে ব্যাংক ব্যবহারের একটা প্রবণতাও তৈরি করতে হবে। তাও আমরা করে দিয়েছি।’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে শিল্পায়ন ছাড়া কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। কিন্তু এ কৃষিভিত্তিক শিল্প আমাদের দরকার। সে ক্ষেত্রে একদিকে আমাদের শিল্পায়ন প্রয়োজন, অপরদিকে আমাদের কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার শিল্পের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর