শিরোনাম
সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলসহ আইসিবির পরামর্শ

ব্যাংকের টাকা এনে পুঁজিবাজার বাঁচানো যাবে না

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ধরে রাখতে ব্যাংক থেকে তহবিল নিয়ে এখন সুদের ফাঁদে পড়েছে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এ থেকে বাঁচতে সরকারকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের পরামর্শ দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া মৌল ভিত্তিসম্পন্ন বহুজাতিক কোম্পানিসহ অন্যান্য দেশীয় কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেও সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আইসিবি।১৯ মার্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো ওই চিঠিতে আইসিবির এমডি কাজী ছানাউল হক বলেছেন, পুঁজিবাজারে আইসিবির ন্যায় বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান না থাকার ফলে সিকিউরিটিজ বিক্রির মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত অর্থ বাজার থেকে সব সময় তোলা সম্ভব হয় না। ফলে ব্যাংকিং খাত থেকে তহবিল সংগ্রহ করার মাধ্যমে এই বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এ কারণে সংস্থাটির মেয়াদি আমানতের স্থিতি ৩০ জুন ২০১১ সালে যা ২ হাজার ২৭১ কোটি টাকা ছিল, এটি ২০১৮ সালের জুনে বেড়ে ১০ হাজার ৮৪১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই আমানতের বিপরীতে সুদ ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। আইসিবির এমডি জানান, ২০১০-১১ অর্থবছরে তারা যেখানে সুদ বাবদ ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, চলতি অর্থবছর শেষে এই সুদ বাবদ তাদের ব্যয় বেড়ে ৯৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। চিঠিতে বলা হয়, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সংস্থাটির মেয়াদি আমানত বৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ হলেও ক্রমযোজিত আয় বৃদ্ধির হার মাত্র ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া পোর্টফোলিওর আয়ে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ হলেও সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধির হার ২৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সুসংহতকরণের জন্য আইসিবি মূলধন কাঠামো আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকা বন্ডের সুদের হার ৯ শতাংশ রাখার ফলে আগামী বছরের সুদ বাবদ ব্যয় আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংস্থাটির এমডি। সংস্থাটি জানায়, বর্ধিত এ ব্যয় সংস্থানের জন্য আইসিবিকে নিজস্ব পোর্টফোলিওর মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ আয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে, যা বাজার স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উপরন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্থাটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হতে আইসিবি কর্তৃক গৃহীত ‘সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার’ বা একক ঋণসীমার অতিরিক্ত অর্থ সমন্বয় করার তাগিদ দিয়েছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে গতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তহবিল জোগান এবং সিকিউরিটিজ সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কয়েক দিন পুঁজিবাজারের সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে পুঁজিবাজারের সূচক পড়তে থাকে। আইসিবি বলছে, ৬ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ছিল ৫ হাজার ২০৪ পয়েন্ট। বন্ডের মাধ্যমে গৃহীত অর্থ বিনিয়োগের পর চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি তা বেড়ে ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। তবে ২৪ জানুয়ারির পর থেকে বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ১৯ মার্চ যেদিন চিঠি পাঠানো হয়, সেদিন দিন শেষে সূচক ছিল ৫ হাজার ৬০৫ পয়েন্ট। এ অবস্থায় বাজারে গতিশীলতা ধরে রাখতে মার্কেট সাপোর্ট ফান্ড গঠনের পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, প্রাথমিকভাবে সরকার কর্তৃক পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল ঘোষণা করে এরপর বছরভিত্তিক পর্যায়ক্রমে অর্থ সরবরাহের জন্য জাতীয় বাজেটে তহবিল সংস্থান রাখা হলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারেই তহবিল গঠনের এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকের টাকা এনে পুঁজিবাজার বাঁচানো যাবে না। ব্যাংকে জনগণ আমানত রাখে নিরাপত্তার জন্য। সেই টাকা পুঁজিবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রুল আছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো আমানতের একটি অংশ বিনিয়োগ করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলোকে আমানতের বিপরীতে সুদ দিতে হয়। তাই এ ধরনের তহবিল বাবদ ব্যয়ও বেশি। সুতরাং ব্যাংকের ঋণ বা জনগণের টাকা দিয়ে নয়, পুঁজিবাজারকে বাঁচাতে সরকারের উচিত হবে ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা, বিভিন্ন ধরনের ম্যানুপুলেশন হয় সেগুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করা। এ ছাড়া ভালো আইপিওসম্পন্ন কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার ওপরও জোর দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর