সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যাংক সুদ কেন কমছে না খতিয়ে দেখা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

ব্যাংক সুদ কেন কমছে না খতিয়ে দেখা হবে : প্রধানমন্ত্রী

সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপের পরও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কেন কমছে না- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ জন্য কিছু কিছু ব্যাংক মালিকের সমালোচনা করেছেন।  বলেছেন, ব্যাংক ঋণে সুদ কেন কমছে না তা খতিয়ে দেখা হবে। খবর বিডি নিউজ।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল জাতীয় শিল্প মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। ব্যাংকের কয়েকটি ব্যাংক। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর সময় প্রকৃত তথ্য গোপন করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ তুলেছেন খোদ সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা। এ নিয়ে সংসদেও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে মাত্র কদিন আগে। আর ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সাবেক ও বর্তমান একাধিক মন্ত্রী ও এমপি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে শিল্পপতিরাও অর্থমন্ত্রীর কাছে বিস্তর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হারের আড়ালে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের শুভঙ্করের ফাঁকি দিচ্ছে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার এবং উচ্চ হারের খেলাপি ঋণ- এ দুটি বিষয়ই আমাদের অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। ব্যাংক ঋণের সুদ একটি গ্রহণযোগ্য ও ব্যবসাবান্ধব পর্যায়ে নিয়ে আসাতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সেজন্য কার্যকর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।  জানা গেছে, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেই কমে যাচ্ছে আমানত। বিপরীতে বাড়ছে ঋণ চাহিদা। এ জন্য ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে। স্বল্পমেয়াদে আমানত রাখে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব আমানতে এত দিন ১০ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়া হতো। কিন্তু সুদ নামিয়ে ৬ শতাংশে আনায় অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যাংক থেকে আমানত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর আমানত কমে যাচ্ছে। এতে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঘোষিত সুদের বেশি হারের সুদের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ নজরদারি করা হচ্ছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। যেসব ব্যাংকের এমডি এখনই ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে অনীহা প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায় থেকে কথা বলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককেও অবহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের (বিএবি) পক্ষ থেকেও ব্যাংকের এমডিদের ওপর ঋণের সুদ কমাতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারছে না কেউই। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর একটি সূত্র জানায়, সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হারের ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেউ বাস্তবায়ন করছে না। বরং উল্টো গত দু-তিন মাসে সুদের হার বেড়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, তারল্য সংকট, খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকের আস্থার সংকট সুদের হার কমাতে দিচ্ছে না। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এর মধ্যে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ তহবিল বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশ করা এবং এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ করা হয়েছিল। তারপরও ঋণের সুদহার বেড়েছে এবং তা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে সরকারের এমন একটি ইতিবাচক পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি, বেসরকারি কিংবা বিদেশি সব খাতের ব্যাংকই ঋণের সুদ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত মার্চ মাসে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৪টি ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়িয়েছে। দেশের ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সবকটিতেই এখন দুই অঙ্কের সুদ গুনছেন ব্যবসায়ী ও ঋণগ্রহীতারা। বর্তমানে শিল্পঋণ পেতে ব্যবসায়ীদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হচ্ছে। যা বিনিয়োগের প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, বেশিরভাগ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোয় গত মার্চে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। যা ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ঋণের সুদহার বেড়েছে দশমিক ১৫ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর